বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘কিংস পার্টি’ দিয়ে নির্বাচন করতে মরিয়া সরকার: রিজভী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২২ নভেম্বর, ২০২৩ ২০:৩৮

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা তার এজেন্সিগুলোকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন তথাকথিত কিংস পার্টি গঠনের জন্য। বিভিন্ন দল থেকে নেতাদের আনতে গরুর হাটের মতো দরদাম চলছে। আওয়ামী লীগের কিংস পার্টিতে যোগ দিতে দেশপ্রেমিক বহু নেতাকে চাপ-প্রলোভন ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ছলে-বলে কৌশলে টোপ দিয়ে কাউকে কাউকে বাগানো হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন তথাকথিত কিংস পার্টি দিয়ে তামাশার নির্বাচন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বুধবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলের প্রতিবাদে ডাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিন শেষে কথা বলেন তিনি। অজ্ঞাত স্থান থেকে ভার্চুয়াল বিফ্রিং থেকে তিনি নেতা-কর্মীদের অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও রাজপথে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান।

নির্বাচনে অন্য দলগুলোর অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘কাজী রকিব আর নুরুল হুদার (সাবেক দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার) দেখানো ভাওতাবাজীর নির্বাচনের পথে হাঁটছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল গং। দেশের জনগণ মাফিয়া চক্রের এই ভুয়া তফসিল প্রত্যাখান করায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এখন মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিনের মতো তথাকথিত কিংস পার্টি, ভুঁইফোঁড় পার্টি, ড্রিংকস পার্টি, ছিন্নমূল পার্টি তৈরি করে তাদেরকে দিয়েই তামাশার নির্বাচন মঞ্চস্থ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।’

এ সময় অভিযোগ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা তার এজেন্সিগুলোকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন তথাকথিত কিংস পার্টি গঠনের জন্য। বিভিন্ন দল থেকে নেতাদের আনতে গরুর হাটের মতো দরদাম চলছে। আওয়ামী লীগের কিংস পার্টিতে যোগ দিতে দেশপ্রেমিক বহু নেতাকে চাপ-প্রলোভন ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ছলে-বলে কৌশলে টোপ দিয়ে কাউকে কাউকে বাগানো হচ্ছে।

‘আবার কেউ কেউ জনগণের ভোটের অধিকার আন্দোলনে না গিয়ে বিরোধী দলের লেবাসে ফ্যাসিবাদের দোসর হয়ে তথাকথিত এসব কিংস পার্টি, ভুঁইফোড়, ছিন্নমূল পার্টির হালুয়া-রুটির ভাগ প্রাপ্তির ভরসায় ফ্যাসিস্টদের বর্তমান আস্তানা বঙ্গভবন-গণভবনে ছুটাছুটি করছে।’

এসব ‘বেঈমান দলছুটরা’ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই সমস্ত রঙ বদলানো পরজীবী রাজনীতিবিদরা জনগণের সংকেতবার্তা টের পাচ্ছে না। জনগণ খুব দ্রুত গতিতে ধেয়ে যাচ্ছে সিংহাসন ধুলায় লুটিয়ে দিতে, জনগণের সেই পদচিহ্ন লক্ষ্য করতে পারছে না এই নব্য রাজাকাররা।’

তিনি বলেন, ‘দেশের কৃষক-শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ, শ্রমজীবী-কৃষিজীবী, পেশাজীবী, আলেম-ওলামাসহ সবাই বর্তমানে মানবিক মর্যাদা, রাজনৈতিক অধিকার, ভোট প্রয়োগের অধিকার হারিয়েছেন। গণবিচ্ছিন্ন এই সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের বদলে অতীতের মতন প্রহসন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার বাসনায় জুলুম-নির্যাতন, চক্রান্ত, নাশকতা ও মিথ্যাচারের পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে অভিযান চালাচ্ছে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের কারাগারে খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনেরা।’

‘দেশের প্রতিটি জনপদ-গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বন্দরে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে’ উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের বেছে বেছে তাদের বাড়িতে হেলমেট বাহিনী হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে। গুপ্ত হামলা, বোমা হামলা চালাচ্ছে। গণতন্ত্রপন্থীদের ধরে নির্যাতন করে পুলিশে দিচ্ছে। আবার আটক বাণিজ্য করছে।’

এ সময় রিজভী দাবি করেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ১৩ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারা দেশে বিএনপির প্রায় ২ কোটি নেতা-কর্মী দিনের পর দিন ঘরছাড়া।

‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, আদালত, বিচারক সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর তল্পিবাহকে পরিণত করা হয়েছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “র‌্যাবের মতো গোয়েন্দা পুলিশও এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় অনুগত উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। গণভবন-বঙ্গভবনে খোলা হয়েছে কমান্ড সেন্টার।

“একতরফা নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। ‘জয় বাংলা বলে আগে বাড়ো’ স্লোগান দিয়ে আমলা ও পুলিশের মতো দেশের বিচারকরাও অন্ধ-অবিচারে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের নির্দেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় সাজা দেয়া হচ্ছে। বিচারের নামে ক্যামেরা ট্রায়াল ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আদালতে সাজানো সাক্ষীর মুখে শেখানো বুলি শিখিয়ে এবং দীর্ঘক্ষণ আটকে রেখে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের আদলে নির্দয় ব্যবহার করা হচ্ছে।”

রিজভীর দেয়া তথ্যানুযায়ী, গত ৪০ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা ২৬টি মিথ্যা মামলায় কথিত বিচার কার্যক্রমের নামে বিএনপির ৪১৫ নেতা-কর্মীকে সাজা দিয়েছে ঢাকার আদালত। বলেন, ‘এখন গায়েবি মামলার মতো গায়েবি সাজা দেয়া হচ্ছে। আগে মৃত ব্যক্তি কবর থেকে উঠে ভোট দিত। আর এখন মৃত ব্যক্তিকে সাজা দেয়া হচ্ছে। বিরোধী দল করলে মরেও শান্তি নাই।’

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘গত পরশু যেখানে মৃত ও গুম ব্যক্তিকে সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করেছে আওয়ামী আদালত। প্রায় চার বছর আগে মারা যাওয়া নিউমার্কেট থানার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের দাইয়াকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ১০ বছর আগে র‌্যাবের হাতে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন এবং ৮ বছর আগে গুম হওয়া বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম জাকিরকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

‘যারা বিচারকের আসনকে মজলুমদের জুলুমের মঞ্চ বানিয়েছেন এবং সেখানে বসে এই ধরনের তামাশা করছেন তাদের বিচার জনগণ একদিন করবে। ইতিহাসের পাতা থেকে এগুলো মুছে ফেলা যাবে না।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের একদফা দাবিতে জনগণের আন্দোলন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে এখন। ফ্যাসিবাদী সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বানচাল করতে নিজেরা আগুন সন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াওয়ের তাণ্ডব চালাচ্ছে। আর বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। অথচ আপনারা দেখেছেন যারা ধরা পড়ছে তারা ক্ষমতাসীনদের লোক।’

তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের মোট ৫১৫ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ২১টি মামলা হয়েছে এবং এসব মামলায় ২ হাজার ৩১৫ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এছাড়া, ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের কয়েকদিন আগে থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ১৯০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার, তাদের বিরুদ্ধে ৩৬৭টির বেশি মামলা হয়েছে। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির মোট ৪ হাজার ৪৬৮ জনের বেশি নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন এবং অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর