দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে নয়াদিল্লিতে যাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন দাবি করেন।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে নভেম্বরের শেষ পর্যায়ে পররাষ্ট্রসচিবের এ সফরে দুই দেশের যৌথ পরামর্শক সভার সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সম্পর্ক আছে কি না কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কোনো রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে ভারত যাচ্ছেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয় পররাষ্ট্র সচিবের কাছে।
জবাবে মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা মেলাতে পারেন। সাধারণত গত এক বছরে আমাদের অগ্রগতি আছে। সেগুলোর একটা টেকিং টকস এবং নির্বাচনের পরে বা আগামী বছরে আমরা কোনো কোনো জায়গায় আরও বেশি দৃশ্যত জোর দিতে পারি, যাতে সময় নষ্ট না হয়, বিশেষ করে যোগাযোগের ক্ষেত্রে।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না অপ্রয়োজনীয় অন্য কোনো হিডেন (লুকোনো) এজেন্ডা আছে। যেহেতু নির্বাচন আছে, তাদের পক্ষ থেকে যদি কোনো জানার থাকে, সেটা তাদের অবহিত করতে পারব। আমি প্রধানমন্ত্রী থেকে আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে যাচ্ছি না।’
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার আমন্ত্রণে চলতি বছরের ফ্রেব্রুয়ারির পর দ্বিতীয় দফায় শুক্রবার দিল্লিতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে। সভায় ঢাকার পক্ষে মাসুদ বিন মোমেন এবং দিল্লির পক্ষে বিনয় কোয়াত্রা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।
চলতি বছরে দুইবার বৈঠক করার কারণ ব্যাখ্যা দেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি জানান, ‘পর্যালোচনা করার জন্য যেতেই পারি। একাধিকবার হবে না, এমন কোথাও বলা নাই। বছরের প্রথমে হয়েছে, এখন আবার বছরের শেষে হচ্ছে। এর মধ্যে প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে।’
বৈঠকে কী কী বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, তা নিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এটা একটা রুটিন মেকানিজম। সেখানে দুই দেশের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। ভারতের সঙ্গে আমাদের এ বৈঠকে অগ্রাধিকার যেসব বিষয় আছে, রাজনীতি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, কানেকটিভিটি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও অভিন্ন নদী সংক্রান্ত, আঞ্চলিক, উপআঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়, উন্নয়ন সহায়তা, কনস্যুলার সংক্রান্ত সহযোগিতার বিষয় থাকবে। এর বাইরেও আলোচনা হতে পারে।’
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কানেকটিভিটির গুত্বে তুলে ধরে সচিব বলেন, ‘কানেকটিভিটি সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। এখন কিন্তু অনেকটা শেইপের মধ্যে এসে গেছে। নর্থ ইন্ডিয়া, মাতারবাড়ী আছে জাপানের সম্পৃক্ততায়। ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের আগ্রহ আছে, আমেরিকার আছে। আমরা কী কী ধরনের প্রজেক্টস নিতে পারি সেখানে। আমরা আমাদের আউটলুকস বলেছি, সেটা নিয়েও আলোচনা করার সুযোগ আছে।’
আলোচনায় আরও কী কী থাকতে পারে, তা তুলে ধরে সচিব বলেন, ‘গ্লোবাল স্বার্থ সংরক্ষণে কীভাবে আমরা কাজ করতে পারি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে কীভাবে আমরা একে অপরকে সহযোতিা বাড়াতে পারি, সে বিষয়গুলো এখানে আলোচিত হবে। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও তাদের আপডেট দেব। কারণ আমরা সবসময় তাদের সহযোগিতা চেয়ে এসেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওদের নির্বাচন আছে সামনে। আমাদের নির্বাচন আছে। নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক, এটা তো খুবই বহুপাক্ষিক সম্পর্ক; ট্রেড আছে, বিনিয়োগ আছে, পিপল টু পিপল কনটাক্ট আছে, ভিসা ইস্যু আছে। এগুলো যাতে নির্বাচনের পরও স্মুথলি চলতে পারে।’
এ সফরকে রাজনৈতিক সফর বলা যায় কি না, তা জানতে চাওয়া হয় মাসুদ বিন মোমেনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যাখ্যা কীভাবে দেবেন আমি জানি না। আমি মনে করি যে, নিয়মিত যে মিটিং হয়, এটাও সেভাবে হবে। এটা ঠিক যে সামনে আমাদের নির্বাচন আছে।’