বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অবৈধ বালু উত্তোলনে ফসলি জমি গিলে খাচ্ছে পদ্মা

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চরতারাপুরের ভাদুরিয়াডাঙ্গী এলাকায় পদ্মা নদীতে প্রকাশ্যে ১৫ থেকে ২০টি ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ চলছে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তদের পাহারায়। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের দেয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি।

পাবনায় পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ও অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তদের পাহারায় চলছে বালু উত্তোলনের মহা কর্মযজ্ঞ। তীর ঘেষে বালুর উত্তোলনের ফলে নদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে কৃষকদের শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই এই এলাকায় ফসলি জমি বলতে আর কিছু থাকবে না বলে আশঙ্কা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের।

বালু উত্তোলন বন্ধ ও কৃষি জমি রক্ষার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-মানববন্ধনও করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে এতে ফল হয়েছে উল্টো। প্রতিবাদ করায় ‘বালুখেকোদের’ মিথ্যা মামলায় অনেক কৃষককে আটক করে পুলিশি হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চরতারাপুরের ভাদুরিয়াডাঙ্গী এলাকায় পদ্মা নদীতে প্রকাশ্যে ১৫ থেকে ২০টি ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। শতাধিক ট্রলারের মাধ্যমে এসব বালু চলে যাচ্ছে পাবনার পাকশী, সুজানগর, কুষ্টিয়ার পাংশা, কুমারখালী ও রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ চলছে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তদের পাহারায়। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের দেয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি।

এক উপজেলা চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে এ বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। ছবি: নিউজবাংলা

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, পাবনার বহুল আলোচিত এক প্রভাবশালী ঠিকাদারের ছত্রছায়ায় পার্শ্ববর্তী সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন ও সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হাসানের নেতৃত্বে এই বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে শুরু হয়েছে ভাঙন।

এ বিষয়ে কৃষক এনামুল হক, আব্দুল হারুণ ও সোবহান প্রামাণিক বলেন, ‘তীব্র ভাঙনে প্রতিদিন বিঘা বিঘা ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খুব শিগগিরই এই এলাকায় ফসলি জমি বলতে আর কিছু থাকবে না। আর এসব সমস্যা দেখার যেন কেউ নেই। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় মিথ্যা মামলায় অনেক কৃষককে আটক করা হয়েছে, পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।’

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শাহীন খান ও সাইফুল ইসলাম বাদশা জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়েই মাবববন্ধন করেছেন কৃষকেরা। তবুও এগুলো বন্ধ হচ্ছে না। বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে কৃষকদের জন্য তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বয়ে আনবে।

এদিকে খোদ জনপ্রতিনিধিরাই প্রভাবশালী এই সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, নৌ-পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন চরতারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক।

তিনি বলেন, ‘বালু উত্তোলনের ফলে আমার ইউনিয়নের কৃষকদের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমি স্থানীয় এমপি, ডিসি, এসপিসহ বিভিন্ন জায়গা বলেছি, কিন্তু কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীনের নেতৃত্বে কিছু প্রভাবশালী এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। আমরা দ্রুত এর বিরুদ্ধে কার্যকরি প্রদক্ষেপ চাই।’

কৃষিজমি নদীগর্ভে গেলেও নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত বালুখেকোরা। ছবি: নিউজবাংলা

এর আগে পদ্মা পাড়েই কৃষকরা বিশাল মানববন্ধন করেন। সেখানে অংশ নেয়া পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারোফ হোসেন বলেন, ‘এটা সত্য যে সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে এখানে বহুদিন ধরেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এরা স্বার্থান্বেষী মহল, নিজেদের স্বার্থের জন্য দলের নাম ভাঙান। আমরা প্রশাসনকে বলেছি বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। আমরা অবৈধভাবে বালু কেটে কৃষকের জমি ক্ষতি করতে দেব না। প্রয়োজনে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করব।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত দোগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হাসানের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘আমরা নাম ব্যবহার তো দূরের কথা, চরতারাপুরে বালুই উত্তোলনই হচ্ছে না। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, আমি নিজেই নিজের ফাঁসি নেব। চরতারাপুরে পদ্মায় কোনো বালু উত্তোলন হচ্ছে না।’

স্থানীয় সংসদ সদস্য, এমনকি প্রশাসনকে জানালেও প্রতিকার মিলছে না ক্ষতিগ্রস্তদের। ছবি: নিউজবাংলা

এ ব্যাপারে পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিদা আক্তার বলেন, ‘যখন মানববন্ধন হয়েছিল, সেখানে আমি গিয়েছিলাম। তখন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল, তখন কৃষকদের আমি বলে এসেছিলাম, আবার বালু উত্তোলন করলে আমাকে জানাতে। কিন্তু তারা পরে আর কিছু জানাননি আমাকে। কিন্তু ওই অঞ্চলে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’

পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, ‘বর্তমান আন্দোলন ও সহিংসতার কারণে জেলা পুলিশের পক্ষে এইসব বালু মহলে বিশেষভাবে নজর দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এজন্য জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ, নৌ-পুলিশের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর