প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য এখন জলজ প্রাণী, খাদ্য চেইন ও মানুষের জীবনের জন্য বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় বর্জ্যগুলোর খাল, নালা, নদী হয়ে সর্বশেষ আশ্রয় হচ্ছে সমুদ্রে।
প্লাস্টিকের মতো অপচনশীল উপকরণের দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা, মাটির উর্বরতা হ্রাস, সামুদ্রিক মাছ ও প্রানীর জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টিকে গুরত্ব দিয়ে প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য ব্যবহারে আরও বেশী সংযমী, সচেতন ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বনে জনগনকে উদ্ভুদ্ধ করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও দাতব্য সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন আয়োজন করেছে ‘প্লাস্টিক সমুদ্র’ শিরোনামে ভিন্নধর্মী এক প্রদর্শনী।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে আয়োজিত এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ শাহীন ইমরান।
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে শীতের মৌসুমে সারা দেশ থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন। এই সময়ে পর্যটকরা যেন যেখানে সেখানে প্লাস্টিক না ফেলেন এবং প্লাস্টিক রিসাইকেল নিয়ে সচেতন হন সেক্ষেত্রে এই আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
বিদ্যানন্দের বোর্ড মেম্বার মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন জানান, কক্সবাজার সৈকতের বালির ওপর নির্মিত পাঁচটি ভাস্কর্য দিয়ে দেখানো হয়েছে মানুষের আবাসস্থল, সেটা হোক বাসাবাড়ী কিংবা আবাসিক হোটেল। সেখান থেকে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফোয়ারার আকারে বেরিয়ে ভূমিতে, জলাশয়ে তথা সমুদ্রে গিয়ে পড়ে এবং জাহাজের মতো ভাসতে থাকে। সামুদ্রিক মাছ, প্রাণী, গাংচিল (পাখিদের প্রতিনিধি) তাদের খাবার মনে করে তা গলাদকরণ করে, যা পরবর্তীতে হজম হয়না। ফলে অকালে মারা যায় নিষ্পাপ প্রাণী ও পাখিগুলো।
‘বড় বড় প্লাস্টিকের টুকরো ও পরিত্যক্ত জালে আটকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কাছিমের মৃত্যু হয়। মরে পড়ে থাকা মাছ কিংবা গাংচিলের পেটে ছোট ছোট প্লাস্টিকের বোতল আর টুকরোগুলো বলে দেয় আমাদের অসচেতনভাবে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক সামগ্রীর দূষণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থান। ফলে নির্মমভাবে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের জীববৈচিত্র্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই কাজটি করার ক্ষেত্রে উপকরণ হিসেবে নানা ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করে মুলত দর্শকদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে চেষ্টা করা হয়েছে নীরবে আমাদের অগোচরে, অজান্তে প্লাস্টিক কীভাবে মানুষের ক্ষতিসাধন করে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সমাজের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা ও ভাগ্য পরিবর্তনে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে নানা রকম সৃজনশীল উদ্যোগ নিয়ে থাকে।’