বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানাধীন নদী বন্দর (লঞ্চঘাট) এলাকা থেকে পিতা-পুত্রকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে কাউনিয়া থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে পিতাকে ছেড়ে দিলেও চাহিদা মোতাবেক টাকা না পেয়ে পুত্রকে ‘সাজানো মাদক মামলা’য় থানায় আটক করে রাখা হয়েছে।
যদিও এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাউনিয়া থানা পুলিশের ওই কর্মকর্তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, আটককৃতের কাছ থেকে ৩ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। তারপরও অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
থানা পুলিশের কাছে আটক থাকা কলেজ ছাত্রের নাম আব্দুল্লাহ বিন লাদেন। ১৭ বছর বয়সী লাদেন বরিশালের সরকারি আলেকান্দা কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র।
লাদেনের বাবা মোসলেম জোমাদ্দার জানান, প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাদের একটি মামলা রয়েছে। যে মামলার নির্ধারিত তারিখে হাজিরা দেয়ার জন্য মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ছেলেকে নিয়ে তিনি মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুর থেকে লঞ্চে করে বরিশালে আসেন। বরিশাল লঞ্চঘাটে নামার পর পুলিশ পরিচয়ে দুই ব্যক্তি তাদের পথরোধ করেন এবং নাম পরিচয় জেনে শরীরে তল্লাশি করেন। তখন কিছু না পেলেও পাশে মাটিতে পড়ে থাকা একটি নীল রংয়ের কাগজ দেখিয়ে বলেন- এই যে পাওয়া গেছে!
তিনি বলেন, ‘এরপর পুলিশ পরিচয় দেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন আমাকে রিকশায় ওঠান ও আরেকজন তার সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেলে আমার ছেলেকে ওঠান। পরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে একটি মাঠের (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) পাশে নিয়ে যান। আর এর মধ্যেই আমার ছেলেকে মারধর করে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকার ব্যবস্থা করতে বাড়িতে আমাদের মোবাইল দিয়েই ফোন করে টাকা চাইতে বলেন। এ সময় তাদের হুমকির মুখে বাড়ির লোকজনকে আমাদের অবস্থান জানাতে পারিনি। এরপর ৪০ হাজার টাকা দাবি করে তারা একটি বিকাশ নম্বর দেন।’
লাদেনের চাচাতো ভাই আব্দুর রহিম বলেন, ‘চাচা ও চাচাতো ভাই অপহরণ হওয়া এবং চাঁদা দেয়ার বিষয়টি জানতে পেরে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর শুরু করি। এরপর যারা টাকা চাচ্ছিল তাদের দেয়া ওই বিকাশ নম্বরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেটা বরিশাল নগরের আমতলার মোড়ে অবস্থিত।
‘এরপর তাদের উদ্ধারে আমরা কোতেয়ালি মডেল থানা পুলিশের কাছে যাই। ৯৯৯-এও ফোন দিয়ে সাহায্য চাই। এ সময় কোতোয়ালি থানা পুলিশ বিষয়টি জানে না বলে জানালে আমরা থানায় অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নেই।’
তিনি বলেন, ‘এরমধ্যে চাচা ফোন করে আমাকে জানান, লাদেনকে কাউনিয়া থানায় আটকে রেখে তাকে (চাচা) কাউনিয়া থানার এসআই রেদওয়ান হোসেন রিয়াদ চর কাউয়া খেয়াঘাটে মোটরসাইকেলে করে নামিয়ে দিয়ে গেছেন। টাকা ম্যানেজ করে তার নম্বরে ফোন দিলে লাদেনকেও ছেড়ে দেয়া হবে বলেছেন।’
আব্দুর রহিম বলেন, ‘চাচা মোসলেম জমাদ্দার গ্রামে গরু পালন ও কৃষিকাজ করেন। তার পক্ষে এত টাকা ম্যানেজ করা সম্ভব না। তাই আমরা এসআই রিয়াদ স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করি, কিন্তু তিনি টাকা ছাড়া চাচাতো ভাইকে ছাড়তে রাজি হননি। এ অবস্থায় আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছি।’
মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চাচা পান ছাড়া কিছুই খান না। আর লাদেন তো বিড়ি-সিগারেটও খায় না। সেখানে মাদকের সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
একই কথা জানিয়েছেন লাদেনের বাবা মোসলেম। তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রামের মানুষ। এতকিছু কীভাবে হলো, তা’ই বুঝতে পারছি না।’
এ বিষয়ে জানতে কাউনিয়া থানায় গিয়ে এসআই রেদওয়ান হোসেন রিয়াদকে না পেয়ে তার মোবাইল নম্বরে ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কাউনিয়া থানার ওসি আসাদুজ্জামান এ ব্যাপারে বলেন, ‘রিয়াদ (এসআই) মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে ৩ পিস ইয়াবাসহ ওই যুবককে আটক করেছেন- এমন খবর আমার কাছে রয়েছে। তার কাছে নাকি আরও ইয়াবা পাওয়ার কথা ছিল। অভিযান শেষ করে বিকেলে তাকে (লাদেন) থানায় রেখে যান তিনি।’
তবে কাউনিয়া থানা পুলিশ অন্য থানা এলাকায় অভিযান চালাতে পারে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তারা খতিয়ে দেখবেন। সেইসঙ্গে এসআই রিয়াদের টাকা চাওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। এতে যদি তার দোষ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন।’