বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বুধবার থেকে সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা করেছে। এর আগে মঙ্গলবার বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনকে কলঙ্কিত করতে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এমনটা অভিযোগ করেন। একইসঙ্গে তিনি বুধবার সকাল ৬টা থেকে দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য রাস্তায় সহিংসতা করছে। ক্ষমতাসীন দলটির অপরাধীরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সারাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিদিন অরাজকতায় লিপ্ত হচ্ছে।
‘তারা গণপরিবহনে আগুন দেয়া অব্যাহত রেখেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে বা পুলিশ চেকপোস্টের কাছে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটার পর অপরাধীরা সহজেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে পারছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অগ্নিসংযোগকারী কয়েকজনকে হাতেনাতে আটক করলেও পরে ক্ষমতাসীন দলের সদস্য হওয়ায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
‘এসব অগ্নিসংযোগ রোধে বা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ করে যে, দেশজুড়ে চলমান নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ক্ষমতায় থাকা অপশক্তি জড়িত।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ক্যাডার ও তাদের অধীনস্ত পুলিশ সদস্যরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যানবাহনে আগুন দিচ্ছে- এমনটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে এবং পোড়া যানবাহনের চালক বা সহকারীদের বক্তব্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে পুলিশ বা ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ী।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সারাদেশে পুলিশ বা র্যাবের শত শত টহল দল এবং কয়েক শ’ প্লাটুন সশস্ত্র বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সুসংগঠিত পুলিশ টহল রয়েছে। এই পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে বিরোধী দলের সদস্যরা যে কোনো ধরনের সহিংসতা বা অগ্নিসংযোগ চালাতে পারে বলে দাবি করাটা হাস্যকর।’
তিনি বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল উপস্থিতির উদ্দেশ্য হতে পারে আওয়ামী ক্যাডারদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে তারা অবাধে যানবাহনে আগুন দিতে পারে, জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে পারে এবং দেশে নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
‘মানুষ হত্যা, জনগণের সম্পদ ধ্বংস, বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানো এবং মিথ্যা মামলায় বিভিন্ন দল ও মতামতকে দমন করার নোংরা রাজনীতির নিন্দা জানাই।’
রিজভী দাবি করেন, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৪৭৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে সারাদেশে নতুন করে সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
রিজভী বলেন, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য এই অবরোধ। বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এই অবরোধ চলবে।
৩১ অক্টোবর থেকে বিরোধী দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচির এটি ষষ্ঠ ধাপ।