দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে কোনো প্রকল্প গ্রহণ, অর্থ অবমুক্ত করা ও অনুদান না দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট চার দপ্তরকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত এই নির্দেশনা বহাল থাকবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ইসির উপ-সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মো. আতিয়ার রহমানের স্বাক্ষর করা চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। একটি চিঠি দেয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে পৃথকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে দেয়া চিঠিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী এলাকায় অনুদান দেয়া, নতুন প্রকল্প গ্রহণ এবং অর্থ ছাড় না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে দেয়া চিঠিতে নির্বাচনের এই সময়ে কোনো এলাকায় ভিজিডি কার্ড ইস্যুসহ নতুন ধরনের কোনো প্রকার অনুদান ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম না করতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ (সংলগ্নী-২) এর বিধি ৩ক অনুযায়ী নির্বাচন-পূর্ব সময়ে অর্থাৎ নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচনের ফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত কোনো সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সরকারি বা আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কোনো প্রকার অনুদান ঘোষণা বা বরাদ্দ দেয়া বা অর্থ অবমুক্ত করতে পারবেন না। এই বিধিমালার বিধান লঙ্ঘন দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উল্লিখিত আচরণ বিধিমালার বিধি ১৮ অনুযায়ী দণ্ডনীয় হবেন।
নির্বাচন কমিশন থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে দেয়া চিঠি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সংসদ নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে নির্বাচন সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় কোনো প্রার্থী সিটি করপোরেশন/পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পত্তি তথা অফিস, যানবাহন, মোবাইল ফোন, টেলিফোন, ওয়াকিটকি বা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। এমনকি মাশুল প্রদান করেও এগুলো ব্যবহার করা যাবে না। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারীকে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
কোনো প্রার্থী সরকারি অর্থে ক্রয় কাজ সংক্রান্ত কোনো দরপত্র আহ্বান, গ্রহণ কিংবা বাতিলের বিষয়েও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন না বলে নির্দেশনায় জানানো হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৩ অনুসারে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কোনো সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কিংবা ফলক উন্মোচন করতে পারবে না। নির্বাচনের কার্যক্রম সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত অনুদান/ত্রাণ বিতরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম বা উন্নয়নমূলক কোনো প্রকল্প অনুমোদন না করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো।
তবে ইতোপূর্বে অনুমোদিত কোনো প্রকল্পে অর্থ অবমুক্ত বা প্রদান করা নিতান্ত আবশ্যক হলে জরুরিভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের সম্মতি গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের উল্লিখিত নির্দেশনার আলোকে একটি পরিপত্র জারি করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকাগুলোতে নতুন ভিজিডি কার্ড ইস্যুসহ নতুন ধরনের কোনো ধরনের অনুদান-ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না।
তবে যেসব ত্রাণ কার্যক্রম আগে থেকে পরিচালিত হচ্ছে সেগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। নতুন করে অনুদান বা ত্রাণ বিতরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ আবশ্যক হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সম্মতি নিতে হবে।