রাজধানীর মিরপুরের কালশী এলাকায় ১৮ নভেম্বর বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সরাসরি জড়িত চার অগ্নিসংযোগকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সোমবার রাতে র্যাব-৪-এর একটি দল রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন আল মোহাম্মদ চাঁন, মো. সাগর, মো. আল-আমিন ওরফে রুবেল ও মো. খোরশেদ আলম।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিত্তিতে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘গ্রেপ্তাররা বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী। তাদের দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নিদের্শনায় আল মোহাম্মদ চাঁন রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবীর আশপাশের এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগ করার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় চাঁন ও তার সহযোগী সাগর ও রুবেল সহ মিরপুর-১১, তালতলা নাভানা, কালশী রোড, সিরামিক রোড এলাকায় যানবাহনে আগুন দেয়ার জন্য রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টা পর্যন্ত রেকি করে।’
তিনি আরও বলেন, আল মোহাম্মদ চাঁন যানবাহনে আগুন দেয়ার জন্য তার বন্ধুর মোটরসাইকেল থেকে ২৫০ এমএল পরিমাণ পেট্রোল বের করে টাইগার এনার্জি ড্রিংকের বোতলে ভরে ঐদিন সন্ধ্যায় আল আমিনের কাছে দেয়। পরবর্তীতে ঐ দিনেই রাত আনুমানিক ১১টার দিকে বাসে অগ্নিসংযোগ করার জন্য রাজধানীর কালশী সড়কে রেকি করে তারা। ওই সময় কালশী সড়কে মসজিদের পাশে থামিয়ে রাখা বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে চাঁনের নির্দেশে আল আমিন বাসের মাঝের একটি জানালা খুলে পেট্রোল ঢেলে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে সাগরের সঙ্গে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার চাঁন রাস্তার আইল্যান্ডের ওপরে দাঁড়িয়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের নির্দেশনা দেয় ও ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে। অন্য কোনো বিরোধী দলের সদস্যরা যাতে এ ঘটনার ছবি তুলতে বা ভিডিও ধারণ করে স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠিয়ে কৃতিত্ব নিতে না পারে সেজন্য চাঁন বাসে আগুন দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খোরশেদকে ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ধারণ করে তাৎক্ষণিক তাকে পাঠাতে বলেন। পরবর্তীতে চাঁন ধারণকৃত ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠায়। বাসে আগুন দেয়ার জন্য চাঁন প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার টাকা করে পেলেও সে সাগর ও আল আমিনকে সাত হাজার টাকা করে দিয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মূলত দলের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ও দলের প্রতি নিজেদের আস্থার প্রতিদান দিতে তারা এ সকল নাশকতা ও সহিংসতার ভিডিও ধারণ করে তাদের দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠাতেন। এছাড়াও নাশকতার এ সকল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করে তাদের সমমনা অন্যান্য অনুসারীদের নাশকতা সৃষ্টিতে প্ররোচিত করতো। পরবর্তীতে স্থানীয় শীর্ষ নেতারা চাঁনকে পুনরায় ২১ নভেম্বর সন্ধ্যায় একইভাবে সুবিধাজনক স্থানে গাড়ি পোড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলেও জানা যায়।’
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তাররা ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে বিরোধী একটি দলের মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করে পল্টন এলাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত পরিবহন, সরকারি পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গেও জড়িত ছিল বলে জানা যায়।