ময়মনসিংহে আবদুর রাজ্জাক রাকিব নামের যুবক হত্যার ঘটনায় মহানগর যুবলীগের বহিষ্কৃত সদস্য ইয়াছিন আরাফাত শাওনসহ আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে রোববার দুপুরে স্মারকলিপি দেয়া হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মহানগর আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও নিহত যুবকের চাচা আবু বক্কর সিদ্দিক সাগর।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবিএম আবু বক্কর সিদ্দিক, ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল উদ্দিন, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এমদাদুল হক মন্ডল, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ফারজানা ববি কাকলি, মহানগর আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ফজলুল হকসহ অনেকে।
এর আগে নগরের চায়না মোড় থেকে আওয়ামী লীগ নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার নারী-পুরুষ মিছিল নিয়ে ‘রাকিব হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই’ স্লোগানে স্লোগানে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এসে মিছিলটি শেষ করেন।
স্মারকলিপি দেয়া শেষে নেতারা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, রাকিব হত্যার ঘটনায় এরই মধ্যে ৯ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যায় জড়িত অন্যরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। নয়তো তারা আবারও অন্য কাউকে হত্যা করে অন্য কোনো মায়ের বুক খালি করবে। এতে সন্তান হবে বাবাহারা; স্ত্রী হবে স্বামী ছাড়া।
তারা পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে লাগাতার আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
প্রেক্ষাপট
গত ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইয়াছিন আরাফাত শাওন ও তার কর্মীরা তিনটি হাই-এইস গাড়ি নিয়ে ময়মনসিংহ শহরে ফিরছিলেন। পথে নগরের চায়না মোড়ের টুলবক্স এলাকা পর্যন্ত আসতেই একটি ট্রাকের পেছনে আটকা পড়ে হাই-এইস। ওই ট্রাকটি সাইড না দেয়ায় ওভারটেকের সময় হাই-এইস গাড়িতে ঘষা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়িতে থাকা ট্রাকচালকের সঙ্গে তর্কে জড়ান শাওন ও তার কর্মীরা। একপর্যায়ে ট্রাকচালককে মারধর শুরু করেন।
ওই সময় স্থানীয় বাসচালকসহ অন্যরা তাদের থামাতে গেলে ক্ষিপ্ত হয়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান শাওন ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন। এতে আবদুর রাজ্জাক রাকিব, সাদেক আলী, শহিদ মিয়া নামে তিনজন জখম হন। এ অবস্থায় আশপাশের লোকজন তাদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক আবদুর রাজ্জাক রাকিবকে মৃত বলে জানান।
রাকিব হত্যার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাতেই স্থানীয়রা চায়না মোড়ে সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে রাত ১১টার দিকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং একজনকে আটক করে পরের দিন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
ছুরিকাঘাতে রাকিব নিহত হওয়ার পরের দিন তার মা হাসি বেগম শাওনসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
গত বৃহস্পতিবার সাভারের আমিনবাজার থেকে মামলার প্রধান আসামি শাওন, তার ভাই মাসুদ পারভেজ, আনিছুর রহমান ফারুক, মো. মানিক, মো. মবিন ও মো. শান্তকে গ্রেপ্তার করে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরের দিন শুক্রবার ভোরে ত্রিশালের উজানভাটিপাড়া এলাকা থেকে ইয়াছিন আরাফাত শাওনের ছোট ভাই মো. প্রান্ত ও মো. রাহাত নামের আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা ডিবির ওসি ফারুক হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া ইয়াছিন আরাফাত শাওনের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা, মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা, আনিছুর রহমান ফারুকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা, মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা, মো. মমিন ও মো. শান্তর বিরুদ্ধে তিনটি করে মামলা রয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তাদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হলে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
‘অন্য দুই আসামিরও সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ডে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’