টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা বাদী মির্জা আফরোজ এশার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার বিকেলে বোয়ালীতে তার বাসার তৃতীয় তলা থেকে ওই যুবতীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরফুউদ্দিন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, শনিবার বিকেলে ওই বাসার একটি কক্ষের ভেতর থেকে ওই নারীর শিশু পুত্রের কান্না শুনতে পান তনিমা আক্তার নামের এক নারী। পরে তিনি আশপাশের লোকজনকে জানালে তারা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী তনিমা আক্তার বলেন, ‘রুম থেকে বের হয়ছি, এমন সময় এশার বাচ্চার কান্না শুনতে পেয়ে দরজায় ধাক্কা দেই। কিন্তু দরজা বন্ধ পেয়ে পুলিশকে কল দেই। পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে রুম খুলে দেখে, এশা ঝুলে আছে।’
টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া বলেন, ‘খবর পেয়ে আলোচিত ধর্ষণ মামলার বাদী মির্জা আফরোজ এশার বাসায় পুলিশের একটি টিম নিয়ে আসি। এসে এশার তিনতলা বাসার একটি রুমে তাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাই। পরে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।’
চলতি বছরের ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন ওই যুবতী। মামলায় তিনি ধর্ষণের কারণে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। বড় মনিরের স্ত্রী নিগার আফতাবকেও এ মামলার আসামি করা হয়।
তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মির্জা আফরোজ এশার শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া না গেলেও তিনি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা, এর প্রমাণ পায় মেডিক্যাল বোর্ড। পরে ৬ এপ্রিল দুপুরে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন ওই যুবতী।
এরপর মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে বড় মনিরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে গত ১৫ মে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহমুদুল মহসীন।
পরে গত ১১ জুলাই বিচারপতি শেখ জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বড় মনিরকে জামিন দেয়। কিন্তু জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর চেম্বার আদালত তার জামিন ফের স্থগিত করে দেয়।
বড় মনিরের হাইকোর্টের দেয়া জামিন ৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর গর্ভে জন্ম নেয়া নবজাতকের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেয় আদালত।
আদালতের নির্দেশে এশার ডিএনএ টেস্ট করা হয়। টেস্টের ফলাফলে জন্ম নেয়া শিশুটি বড় মনিরের নয় বলে উল্লেখ করা হয়। এ রিপোর্টের ওপর শুনানি শেষে গত ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগ বড় মনিরের জামিন মঞ্জুর করে।
বড় মনির টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভুঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই এবং জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব।