নিম্নচাপের প্রভাবে মৌলভীবাজারে টানা ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আগে থেকেই ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাটের আরও ক্ষতি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাধারণ দিনমজুর ও কৃষকের জীবনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস বলছে, চলমান এ বৃষ্টিপাত রোববার পর্যন্ত কমবেশি থাকবে।
জেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভারী বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ আমন ধান, বিভিন্ন ফসল ও সবজির খেত তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি থামলেও এসব খেতের সবজি অতিরিক্ত পানির কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিম্নাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। টানা বৃষ্টির কারণে রিকশা-ভ্যানচালক, দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। হাটবাজারে মানুষের সমাগমও কমে গেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, টানা বৃষ্টির কারণে ধানি জমি ও শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি কমলেও বেশির ভাগ সবজি খেত আর বাঁচানো যাবে না। মৌসুমের এই সময়ে এমনিতেই সবজির কিছুটা অভাব থাকে। আর এখন এমন বৃষ্টিতে আমাদের লাভের আশাটুকুও শেষ হয়ে গেল।
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার সবজি চাষি সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এত কষ্টের ফসলগুলো চোখের সামনেই বৃষ্টির পানিতে একটু একটু করে ডুবে যাচ্ছে। চারপাশে থৈ থৈ করছে পানি। কত ত্যাগ, কতটা শ্রম, কতটা সময় ব্যায় হয়েছে আমার এই ফসল চাষে, এখন পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেল!’
কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ঠেলাচালক হুসন মিয়া বলেন, ‘সকালে ঠেলা নিয়ে বের হয়েছিলাম। ১০ টাকাও কামাই করতে পারিনি। নিজে কী খাব আর পরিবারকেই বা কী খাওয়াবো, তা নিয়ে চিন্তায় আছি। পেট তো আর মানে না, তাই শীত লাগলেও পলিথিন গায়ে জড়িয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি, যদি কোনো কাজ পাই- এই আশায়।’
কুলাউড়া পৌরসভার বাসিন্দা দিনমজুর আজিজ বলেন, ‘দুই দিন ধরে ঘরে বসে আছি; কাজে যেতে পারছি না। এদিকে বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে সমস্যায় পড়েছি ভাই।’
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, ‘ভারী বৃষ্টির কারণে সবজির কিছুটা ক্ষতি হবে। বৃষ্টিতে বেশ কিছু সবজি খেত তলিয়ে গেছে।’
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক বিবলু চন্দ্র দাস জানান, নিম্নচাপের কারণে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আকশে এখনও অনেক বৃষ্টি আছে। আরও দু’দিন এ ধরনের আবহাওয়া থাকবে।
জেলা কৃষি উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এভাবে বৃষ্টি হলে আমন ধান ও সবজির প্রচুর ক্ষতি হবে। শুনেছি আরও ৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টি থাকবে। যদি এভাবে বৃষ্টি হতে থাকে, তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’