নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সংবিধান এবং আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে কিছু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে- নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিশ্চিত করা আছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের মাধ্যমে নির্বাচন সংক্রান্ত আইন এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে।
কর্মকর্তা বদলি
নির্বাচন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন চাইলে প্রশাসনের মধ্যে রদবদল আনতে পারে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং তাদের অধস্তন কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা ছাড়া বদলি করা যাবে না।
অন্যদিকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে বদলি করার প্রয়োজন হলে করলে নির্বাচন কমিশন লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব সে বদলি কার্যকর করতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী যদি সরকার কাজ না করে তাহলে আইনের বরখেলাপ হবে।
‘সাধারণত দেখা যায়, সরকার সবসময় তাদের পছন্দমতো কর্মকর্তাদের সেসব জায়গায় নিয়োগ দেয়। এটা সব সরকারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।’
তবে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তাকে বদলি করা কিংবা না করা হলে সেক্ষেত্রে কমিশন কী করতে পারে তা নিয়ে আইনে সরাসরি কিছু বলা নেই।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম এ বিষয়ে বলেন, ‘সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে।’
ভারতের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সেদেশে সরকার নির্বাচন কমিশনের কোনো অনুরোধ উপেক্ষা করলে কমিশন আদালতের শরণাপন্ন হয়। বাংলাদেশে কখনোই কোনো ইলেকশন কমিশন আদালতে যায়নি।’
একই উদাহরণ তুলে ধরে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আইনের ব্যত্যয় হলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করে।’
প্রার্থিতা বাতিল
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যদি কোনো প্রার্থী নির্বাচনী আইন ও আচরণ বিধির গুরুতর লঙ্ঘন করেন, সেক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়টিতে নির্বাচন কমিশনের পুরোপরি এখতিয়ার রয়েছে।
এমনটা উল্লেখ করে আব্দুল আলীম বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনো উদারহণ নেই। নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা ও সতর্ক করার নজির থাকলেও প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি দেখা যায় না।’
রিটার্নিং অফিসার নিয়ন্ত্রণ
বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে উল্লেখ করা আছে, একজন রিটার্নিং অফিসারকে নির্বাচন কমিশন যেভাবে দায়িত্ব দেবে, তিনি সেভাবে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য থাকবেন।
বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, সংশ্লিষ্ট জেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকই সর্বেসর্বা।
জেলা প্রশাসকরা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা নন। তারা যদি কমিশনের নির্দেশনা মেনে না চলেন সেক্ষেত্রে কমিশন কী করতে পারে?
এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ও বাতিল করা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাকে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি বাতিল করতে পারে।’
ভোটের ফল বাতিল
গত ১৯ মে গণপ্রতিনিত্ব আদেশের সংশোধনী অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর বের হয়- ‘নির্বাচনের পর ফল বাতিল করতে পারবে না কমিশন।’ এতে নির্বাচন কমিশনের ‘ক্ষমতা খর্ব হয়েছে’ বলে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়।
তখন নির্বাচন কমিশনের সচিব গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে নির্বাচনী কার্যক্রম ও ভোট চলাকালে নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা কমিশনের হাতে আছে। যে সংশোধনী যুক্ত করা হয়েছে সেটি হচ্ছে- নির্বাচনের ফল গেজেট বা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হওয়ার পর পুরো নির্বাচনের ফল বাতিল করা যাবে না।
পরবর্তীতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন দাবি করে- ভোট চলাকালে কমিশনের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা আছে। কমিশন আবশ্যিক মনে করলে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করা স্থগিত রাখতে পারবে। এই ক্ষমতা আগে ছিল না।
নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ তদন্ত করতে পারবে, যেটি আগে পারতো না বলে নির্বাচন কমিশন দাবি করছে। তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সংগত মনে করলে যেসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে সেসব কেন্দ্রের ফল বাতিল করতে পারবে কমিশন।
২০২২ সালের অক্টোবর মাসে গাইবান্ধায় একটি আসনে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে সেদিনই ভোটগ্রহণ বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, কমিশনের এই ক্ষমতা বহাল আছে।