ময়মনসিংহে ছুরিকাঘাতে আব্দুর রাজ্জাক রাকিব নামে ২৪ বছর বয়সী এক যুবক খুনের ঘটনায় ফুঁসছে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসী শাওনসহ তার সঙ্গীদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর চায়না মোড় এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ হাজারো মানুষ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘হত্যার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামিরা। সিসিটিভি ফুটেজে আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে, তবুও পুলিশ বলছে- খোঁজাখুঁজি চলছে। দ্রুত সব আসামিকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ময়মনসিংহে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দেয়া হবে। অচল করে দেয়া হবে ময়মনসিংহ।’
মানববন্ধনে ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এমদাদুল হক মন্ডল, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারজানা ববি কাকলি, মহানগর আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক সাগর, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম মিন্টুসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
গত শনিবার নির্বাচনী এলাকা ফুলপুরে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। ওই অনুষ্ঠানে তিনটি মাইক্রোবাসে করে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যোগ দেন ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়ার বাসিন্দা ও মহানগর যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইয়াসিন আরাফাত শাওন। কর্মসূচি শেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশি পাহারায় প্রতিমন্ত্রীর গাড়ি ময়মনসিংহ শহরে চলে যায়। ময়মনসিংহ শহরে ফেরার পথে তার বহরে থাকা তিনটি গাড়ি চায়না মোড়ের টুলবক্সের সঙ্গে সাব্বির ফিলিং স্টেশনের বিপরীতে একটি ট্রাকের পেছনে আটকা পড়ে। ওই ট্রাকটি থেকে সিটি করপোরেশনের চাঁদা তোলা হচ্ছিল। ট্রাকটি সাইড না দেয়ায় ওভারটেকের সময় যুবলীগ নেতা-কর্মীবাহী গাড়িটিতে ঘষা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়িতে থাকা ট্রাকচালকের সঙ্গে তর্কে জড়ান শাওন ও তার কর্মীরা। একপর্যায়ে তারা ট্রাকচালককে মারধর শুরু করেন। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাসচালকসহ অন্যরা তাদের থামাতে গেলে যুবলীগ নেতা-কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় আব্দুর রাজ্জাক রাকিব, সাদেক আলী ও শহিদ মিয়া নামে তিনজন জখম হন। পরে আশপাশের লোকজন তাদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাক রাকিবকে মৃত ঘোষণা করেন।
আহত দুজন হলেন- একই এলাকার জায়েদ উদ্দিনের ছেলে ৩২ বছর বয়সী সাদেক আলী ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের চর ঝাউগড়া এলাকার মৃত আক্তার আলীর ছেলে ৪০ বছর বয়সী শহিদ মিয়া। তারা বাসের চালক ও হেলপার।
রাকিব হত্যার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাতেই স্থানীয়রা চায়না মোড়ে সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে রাত ১১টার দিকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনার পরদিন নিহতের মা হাসি বেগম মহানগর যুবলীগের বহিষ্কৃত সদস্য শাওনসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
এখানে উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৯ মে ইয়াসিন আরাফাত শাওনকে ময়মনসিংহের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ আখ্যায়িত করেন র্যাব-১৪-এর তৎকালীন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এফতেখার উদ্দিন।
তার নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদকের মামলা রয়েছে। সেসময় পুরোহিতপাড়া এলাকায় তার বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ তখন দুটি পিস্তল, একটি রিভলভার, তিনটি ম্যাগজিন দুটি শর্টগান, সাতটি রামদা, একটি রাইফেলের টেলিস্কোপিং সাইটসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ, ইয়াবা এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে।
ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া, চামড়াগুদাম ও পুরহিতপাড়াবাসী শীর্ষ সন্ত্রাসী ইয়াসিন আরাফাত শাওনের গ্রেপ্তার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশসহ আন্দোলন করার প্রেক্ষিতে র্যাব তাকে ৬ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতনসহ অন্তত ৯টি মামলা রয়েছে।
ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল পাঠান বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শাওন পারভেজকে প্রায় দেড় বছর আগে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার সঙ্গে যুবলীগের কোনো সম্পর্ক নেই।’
নিহত রাকিবের চাচা ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক সাগর বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সন্ত্রাসী শাওনসহ সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তবুও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারছে না। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে ময়মনসিংহ অচল করে দেয়া হবে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, ‘মাজাহারুল ইসলাম নামে এক আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য সব আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।’