বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষকদের উঠিয়ে চেয়ারে বসলেন জাবি ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক

  • প্রতিনিধি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ ১৯:১০

অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার প্রায় আধঘণ্টা পর অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হন জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। এসে সামনের দিকের আসনে জায়গা না পেয়ে ক্ষেপে যান তিনি। পরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই দুই শিক্ষককে তৃতীয় সারির আসন থেকে উঠিয়ে পেছেনে বসার ব্যবস্থা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান। শিক্ষকদের আসনে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বসান তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রধানমন্ত্রীর নবনির্মিত ৬টি হল ও একটি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দুই শিক্ষককে তাদের আসন থেকে উঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বসানোর ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে এ ঘটনা ঘটে।

সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ১৫৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৪১টি স্থাপনার উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হল প্রাধ্যক্ষগণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অনুষ্ঠান শুরুর ২৪ মিনিট পর অন্তত ২০ জন নেতা-কর্মীসহ অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হন জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। ততক্ষণে অডিটোরিয়াম ভবন অতিথিতে পরিপূর্ণ। এসে সামনের দিকের আসনে জায়গা না পেয়ে ক্ষেপে যান তিনি। এ সময় তাদের শান্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান এগিয়ে আসেন। পরে প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রক্টর তাদের নিয়ে অডিটোরিয়ামের বাইরে চলে যান। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী স্লোগান দিতে শুরু করেন। পরে প্রক্টরের অনুরোধে স্লোগান বন্ধ করেন তারা।

অডিটোরিয়াম ভবনের সামনে গিয়ে প্রক্টরের সঙ্গে আরেক দফায় বাগবিতণ্ডায় জড়ান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তার অনুসারীরা।

এ সময় সহ-সভাপতি পদমর্যাদার এক নেতা অনুষ্ঠান চলাকালে অডিটোরিয়াম ভবনে তালা দেয়ার হুমকি দেন। ওই নেতা বলেন, ‘আমাদের জন্য জায়গা রাখা হয়নি। আমরা তাহলে অডিটোরিয়ামে তালা দিয়ে চলে যাই।’

এর কিছুক্ষণ পর অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হন জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে অডিটোরিয়ামের তৃতীয় সারিতে বসা প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও দর্শন বিভাগের দুই প্রভাষককে তাদের জায়গা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন প্রক্টর ফিরোজ-উল-হাসান৷ পরে শিক্ষকদের যথাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম সারির আসনে বসানো হয়। শিক্ষকদের তৃতীয় সারির আসনে বসেন জাবি ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। পরে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই ওই দুই শিক্ষক অডিটোরিয়াম ত্যাগ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের এমন আচরণকে ‘অশোভন’ ও শিক্ষকদের জন্য ‘লজ্জাকর’ বলে মন্তব্য করেন উপস্থিত শিক্ষকরা।

জীববিজ্ঞান অনুষদের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘এমন জাঁকজমকপূর্ণ প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের এমন আচরণ খুবই অশোভন। ভরা মজলিসে দুইজন সম্মানিত শিক্ষককে তুলে দিয়ে সেই জায়গায় ছাত্রলীগ নেতাদের বসানো শিক্ষকদের জন্য অসম্মানজনক ও লজ্জার। আমি এই ঘটনার নিন্দা জানাই।’

আরেক অধ্যাপক বলেন, ‘ষষ্ঠ ও সপ্তম সারিতে জায়গা যখন ফাঁকাই ছিল, তখন ছাত্রলীগ নেতাদের সেই আসনে বসানো যেত। শিক্ষকদের তুলে দেয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তাদেরকে তুলে দিয়ে শিক্ষক সমাজের মর্যাদাকে নিচু করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগকে আগে আসতে বলেছিলাম। আগে আসলে এই ঘটনা ঘটত না। ছাত্রলীগের সকল নেতা-কর্মীর দাবি ছিল, স্ক্রিনে যাতে সভাপতি-সেক্রেটারিকে দেখা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সারিতে বসতে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার ওখানে অনুরোধ করার মতো জুনিয়র ওই দুজনই (শিক্ষক) ছিলেন। আর অন্য কাউকে অনুরোধ করার কোনো সুযোগ ছিল না। ম্যাক্সিমাম সিনিয়র এবং অন্য অপরিচিত যারা, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-অফিসাররা সেখানে ছিলেন। এই দুজন আমার অত্যন্ত কাছের এবং আপনজন দেখেই আমি তাদের অনুরোধ করতে পেরেছি। তারা হয়তো মনে কষ্ট পেয়েছেন। তবে কষ্ট পেলেও তারা অনুরোধ রেখেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তো সব মিলিয়ে সমন্বয় করতে হয়। ওরা আগে আসলে এই সমস্যাটা হতো না, সামনের দিকে বসতে পারত। আমি প্রত্যাশা করব যে, এর পরে কোনো প্রোগ্রামে তারা যেন নির্দিষ্ট সময়ে আসে এবং তারা যেখানে বসতে চায়, সেখানে বসতে পারে। পুরো প্রোগ্রামটা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থেই আমি খুব কাছের দুজন মানুষকে অনুরোধ করেছি।’

জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এম শামীম কায়সার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অডিটরিয়ামের দ্বিতীয় তলায় বসবেন এটি পূর্বনির্ধারিতই ছিল। শিক্ষার্থীদের তো সেখানে বসার কথা ছিল না। কিন্তু তবুও কোনো শিক্ষকের সঙ্গে যদি এরকম ঘটনা ঘটে থাকে এবং তিনি যদি আমাকে (শিক্ষক সমিতির সম্পাদক হিসেবে) অনানুষ্ঠানিকভাবেও জানান, তাহলে আমরা শিক্ষক সমিতি এর প্রতিবাদ করব। আর এ বিষয়টি নিয়ে আমি প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলব।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আমরা অডিটোরিয়ামের বাইরে ছিলাম। প্রক্টর স্যার আমাদের ভেতরে যেতে বললে আমরা গিয়ে আসন ফাঁকা পাই। এখানে কারা বসেছিল, আমরা কিছুই জানি না, প্রক্টর স্যার জানেন।’

তবে জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ বিভাগের আরো খবর