বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেন ৪৫ যাত্রীকে ফিরিয়ে দেয়া হলো শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে

  • প্রতিবেদক, সিলেট   
  • ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০৯:৫৩

অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রাভেল এজেন্ট বাংলাদেশের (আটাব) সিলেটের সাবেক সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, ‘যাত্রীকে গন্তব্য থেকে ফেরত পাঠালে এয়ারলাইন্সকে মোটা অঙ্কের জরিমানা গুণতে হয়। কানাডার ক্ষেত্রে যাত্রীপ্রতি প্রায় এক হাজার ৯০০ ডলার জরিমানা দিতে হয় এয়ারলাইন্সকে। এই জরিমানা থেকে বাঁচতেই তারা কাগজপত্র পরীক্ষা করে।’

পর্যটক ভিসায় কানাডা যাওয়ার জন্য সিলেট থেকে রওনা দিয়েছিলেন ৪৫ যাত্রী। কানাডার ভিসাও ছিল তাদের, কিন্তু বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে আটকে দেন তাদের।

আমন্ত্রণপত্র সঠিক না থাকার অভিযোগ এনে এই ৪৫ যাত্রীকে অফলোড করে ফেরত পাঠায় বিমান কর্তৃপক্ষ।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ৭ নভেম্বর ঘটেছে এ ঘটনা, তবে ১২ নভেম্বর বিষয়টি জানাজানি হয়।

বিভিন্ন মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও বিমান কর্তৃপক্ষ কেন যাত্রীদের আটকাবে?

বিমানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানি ও জিম্মি করারও অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

তবে বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, কানাডা ইমিগ্রেশনের মতামতের ভিত্তিতে নিয়ম মেনেই এই যাত্রীদের কানাডা যেতে দেয়া হয়নি। একটি বিয়ের আমন্ত্রণে ৪৫ জন একসঙ্গে কানাডা যেতে চাচ্ছিলেন। সেখানে থাকার জন্য হোটেলও বুকিং দেননি তারা। সব এয়ারলাইন্সেই বিদেশি যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে। কারণ ভুয়া কাগজপত্রের যাত্রী পরিবহন করলে এয়ারলাইন্সকে বড় অঙ্কের জরিমানা গুণতে হয়।

কানাডার উদ্দেশে রওনা দিয়ে ৭ নভেম্বর ঢাকা বিমানবন্দরে আটকে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে তিনজনের সঙ্গে কথা হয় সোমবার। তারা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কাস্তরাইল এলাকার বাসিন্দা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের একজন বলেন, ‘কানাডার টরন্টোতে আমার ভাগনির বিয়ে। সেই বিয়েতে অংশ নিতে অ্যাম্বাসিতে সব কাগজপত্র জমা দেয়ার পর কানাডা আমাদের ভিসা দেয়। আমাদের ফ্লাইট ছিল সিলেট-ঢাকা-কানাডা। ৬ নভেম্বর সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে সব কাগজপত্র পরীক্ষা করেই আমাদের বোডিং পাস দেয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘৭ নভেম্বর ঢাকা থেকে বিমানে টরন্টো রওনা দেয়ার কথা, কিন্তু শাহজালাল বিমানবন্দরে আমাদের অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে বিমানের এক কর্মকর্তা এসে জানান, আমাদের হোটেল বুকিং নেই। পরে আমরা হোটেল বুকিং করে তাকে কাগজপত্র প্রদান করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর পর ওই কর্মকর্তা আমাদের জানান, কানাডা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে তারা আমাদের ব্যাপারে ই-মেইল করেছেন। সেখান থেকে ক্লিয়ারেন্স না আসলে আমরা যেতে পারব না। এভাবে নানা অজুহাতে আমাদের অনেকক্ষণ বিমান বন্দরে বসিয়ে রেখে পরে ফিরিয়ে দেয়া হয়।’

ওই সময় বিমানের এক কর্মকর্তা তাদের কাছে টাকা দাবি করেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এই পরিবারের আরেক সদস্য বলেন, ‘আমাদের ভিসা আছে। বিয়ের কার্ড, হল বুকিং সবই আছে। তারপরও তারা কেন আমাদের আটকাবে। বিমান কর্তৃপক্ষ আমাদের আটকানোর কে?

‘আমাদের কাগজপত্রে কোনো সমস্যা থাকলে কানাডা যাওয়ার পর সেখানকার বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আটকাতে পারে, কিন্তু কানাডা ভিসা দেয়ার পরও বিমান কর্তৃপক্ষ আটকাবে কেন?’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিমানের একটি সিন্ডিকেট অবৈধ সুবিধা আদায়ের জন্যই এমনটি করেছে। এর আগে তারা ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই যাত্রীদেরও এভাবে হয়রানি করত।

‘তাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করেই দুবাই যেতে হতো। এখন যেহেতু অনেক লোক কানাডায় যাচ্ছে, তাই তারা এরকম সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।’

কানাডা যেতে না দিয়ে তাদের হেনস্তা ও আর্থিক ক্ষতির প্রতিকার চেয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি কানাডা পর্যটক ভিসা সহজ করায় সিলেট থেকে এই ক্যাটাগরির ভিসায় কানাডা যাওয়ার হিড়িক পড়েছে। পর্যটক ভিসায় কানাডায় গিয়ে অনেকে সেখান থেকে যাওয়ারও চেষ্টা করছেন। পর্যটক ভিসায় কানাডা যেতে ওই দেশে বসবাসরত কারো কাছ থেকে আমন্ত্রণপত্র আনাতে হয়। বিভিন্ন এজেন্সি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আমন্ত্রনপত্রসহ ভুয়া বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করে যাত্রীদের বিপদে ফেলার অভিযোগ রয়েছে।

বিমানের একটি সূত্র জানায়, বিয়ের আমন্ত্রণে ৭ নভেম্বর ৪৫ জন কানাডা যেতে চাচ্ছিলেন, সেই একই বিয়ের আমন্ত্রণে আরও প্রায় ৩০ জন গত মাসে কানাডা গিয়েছেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানায়, ৬ নভেম্বর রাতে ওই ৪৫ জন ট্রানজিটে অপেক্ষা করার সময় বিমানের পাসপোর্ট চেকিং ইউনিটের সদস্যদের সন্দেহ হয়। তারা দেখতে পান, ওই যাত্রীদের প্রায় সবার সাদা পাসপোর্টে কানাডার ভিসা লাগানো। এতে তাদের সন্দেহ আরও বাড়ে। ওই সময় বিমান কর্মকর্তারা তাদের আমন্ত্রণপত্র ও হোটেল বুকিং দেখতে চান।

তখন তারা দেখতে পান, ওই যাত্রীদের সবাই একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কানাডা যাচ্ছেন। আর হোটেল বুকিংয়ের পরিবর্তে তারা কিছু বাড়ি ভাড়ার কাগজপত্র দেখান।

এ প্রসঙ্গে সোমবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিলেট কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘ঘটনাটি শাহজালাল বিমানবন্দরে ঘটেছে। আমি যতদূর শুনেছি তাদের আমন্ত্রণপত্রে কানাডায় গিয়ে হোটেলে থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও, তারা সেখানে হোটেল বুকিং না করে বাসা ভাড়া করেন। এ থেকে বিমান কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। এর পর খোঁজ নিয়ে আরও কিছু কাগজপত্রে গরমিল পাওয়া যায়।

‘তখন কানাডার দূতাবাস থেকে তাদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সেখান থেকে জানানো হয়, তাদের ‘ডকুমেন্ট ফলস’। তাদের আইন অনুযায়ী এটা ফায়ার কোড ভায়োলেশন।’

কানাডা ইমিগ্রেশনের বদলে বাংলাদেশ বিমান থেকে কেন এসব কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাত্রীর সব কাগজপত্র পরীক্ষার দায়িত্ব এয়ারলাইন্সের। সব এয়ারলাইন্সই এটি করে। কারণ ভুল ডকুমেন্টে যাত্রী নিলে এয়ারলাইন্সকে বড় অঙ্কের জরিমানা গুণতে হয়।’

একই তথ্য জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রাভেল এজেন্ট বাংলাদেশ (আটাব) সিলেটের সাবেক সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিলও।

তিনি বলেন, ‘সব এয়ারলাইন্সেই ভিসা পরীক্ষা করার জন্য একজন প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা থাকেন। তারা ভিসা ভালো করে পরীক্ষা করে থাকেন। যাত্রীর ব্যাপারে সন্দেহ হলে অন্য কাগজপত্রও তারা দেখতে পারেন। কারণ যাত্রীকে গন্তব্য থেকে ফেরত পাঠালে এয়ারলাইন্সকে মোটা অঙ্কের জরিমানা গুণতে হয়। কানাডার ক্ষেত্রে যাত্রীপ্রতি প্রায় এক হাজার ৯০০ ডলার জরিমানা দিতে হয় এয়ারলাইন্সকে। এই জরিমানা থেকে বাঁচতেই তারা কাগজপত্র পরীক্ষা করে।’

এ বিভাগের আরো খবর