দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে পারাটা সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এখনকার লক্ষ্য হলো দেশের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সুবিধা নিশ্চিত করা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের অর্জন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কথাগুলো বলেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সচিবালয়ে সোমবার নিউজবাংলার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় টানা তিন মেয়াদে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিদ্যুতের মিটারসহ পুরো ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজেশনে কাজ চলছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সফলতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন বিদ্যুৎ না দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, জাতির পিতাও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বলেছিলেন- শহরের মতো গ্রামেও বিদ্যুৎ দিতে হবে।’
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ঘোষণা করেছিলো ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কথা। তবে সে সময় অনেকেই তা বিশ্বাস করেনি মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সদিচ্ছা থাকলে এদেশেও যে অনেক কিছুই করা সম্ভব তা প্রমাণ করেছে বর্তমান সরকার।
‘করোনার কারণে কিছুটা বিলম্ব হলেও ২০২২ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি ঘরে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর সক্ষমতা তৈরি করেছে সরকার। এর সুবিধা সবচেয়ে বেশি পাচ্ছে গ্রামের মানুষ। তারা মধ্যরাত পর্যন্ত নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারছে। ফলে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়ছে।’
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহের সুবাদে বিগত ১০ থেকে ১২ বছরে দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কারখানা তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘একটা সময় যখন বিদ্যুতের ব্যাপক লোডশেডিং হতো তখন উদ্যোক্তারা কারখানা গড়তে ভয় পেতেন। এখন প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। এর প্রভাবে গেল এক যুগে শিল্পে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে।’
অনেক ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই অবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হবে না। সময় এসেছে পরিকল্পিতভাবে কারখানা গড়ে তোলার।’
বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২৮ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট জানিয়ে নসরুল হামিদ একইসঙ্গে বলেন, তবে এটি ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমাদের সামনে তিনটি চ্যালেঞ্জ- বিদ্যুৎ উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখা, গ্রাহকের জন্য সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করা ও চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে যোগানের সমন্বয় রাখা।’
তিনি জানান, এই খাতে সরকার এখনেও বড় অংকের ভর্তুকি দিচ্ছে। তবে তা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসার কথাও বলেন। অন্যদিকে ভর্তুকি দেয়াটা দেশের জন্য এক ধরনের বিনিয়োগ বলেও মনে করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, যে এলএনজি কিনতে ৭ থেকে ৮ ডলার খরচ হতো তা এক সময় ৬৪ ডলারে উঠে গিয়েছিল। এর চাপে দামে কিছুটা সমন্বয় করতে হয়েছে। তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘গ্যাসের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে সমন্বয় করা হবে।’
‘আমাদের এখন লক্ষ্য স্বল্প গ্যাসে বেশি উৎপাদন’ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার ৬শ এমএমসি, যা কয়েক বছর পর প্রায় ৫ হাজারে গিয়ে দাঁড়াবে। সেই সময়ের চাহিদা পূরণে মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। আমদানির পাশাপাশি দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস আহরণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ‘ভর্তুকি নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু আমি বলতে চাই দেশের জনগোষ্ঠীল বিশাল একটি অংশ নামমাত্র মূল্যে বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এগুলো বেশিরভাগই গ্রামে, যারা প্রতিমাসে মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছেন। তাদেরকে সহায়তার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও রয়েছে।’
প্রযুক্তির ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিভাগ ডিজিটাল পুরস্কার পেয়েছে জানিয়ে স্মার্ট দেশ নির্মাণে বিদ্যুৎ নিয়ে নিজ চিন্তা-ভাবনাও তুলে ধরেন নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন বিদ্যুতের গ্রাহক প্রায় ৪ কোটি ৮৬ লাখ। প্রত্যেক গ্রাহককে আমরা স্মার্ট মিটার দেয়ার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত ৫৫ লাখ গ্রাহককে সেটা দিতে পেরেছি। ২০৩৫ সালের মধ্যে পুরো ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’
ট্রান্সমিশন লাইন বাড়ানো, কার্যকর সাব-স্টেশন তৈরি, আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে বিদ্যুতের লাইন বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি।
গ্রাহককে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ দেয়ার ওপর জোর দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোনটা সাশ্রয়ী মূল্য তা নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক শ্রেণীর আয়ের ওপর। বর্তমানে প্রতিটি মানুষ গড়ে ৫৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। এটাকে ১২ শ কিলোওয়াটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আর বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়লে তা মাথাপিছু আয় বাড়াতেও সহায়ক হবে।