বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রায়গঞ্জে ওয়ারিশান বণ্টনের জন্য উৎস কর নেয়ার অভিযোগ

  •    
  • ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ১১:০৭

সিরাজগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কয়েক দিন আগে এমন একটি অভিযোগের অনুলিপি আমি পেয়েছি। রায়গঞ্জ অফিসে ওয়ারিশান বণ্টন এবং দানপত্র দলিলের জন্য এক ভাগ উৎস কর নেয়া হয়। আসলে কোনোভাবেই এ কর নেয়ার বিধান নেই। আর সরকারি কোষাগারের জন্য পে-অর্ডার নগদায়ন কীভাবে করে আমার জানা নেই। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে টাকা ছাড়া জমির দলিল হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী দাবি করা এক ব্যক্তি। তার অভিযোগ, সরকারি এ দপ্তরে উৎস করের নামে টাকা আদায় করে তা চলে যাচ্ছে একটি চক্রের হাতে।

ভুক্তভোগী দাবি করা ওই ব্যক্তি আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি জনসমক্ষে আসে। তার অভিযোগ, জমির মূল্য অনুযায়ী পে-অর্ডার করলেও দলিলে লেখা হয় কম। আর তাতেই সন্দেহ হয় তার।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যাংকের হিসাবে পে-অর্ডার নগদায়ন করার সংখ্যাও অনেক।

রায়গঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার জানান, জাল জালিয়াতি চক্র এমনটা করতে পারে, তবে তিনি এর সঙ্গে জড়িত নন।

বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন জেলা রেজিস্ট্রার।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ক্ষিরতলা গ্রামের হাজী আসরাইল হোসেনের ছেলে মো. জাকির হোসেন জাকিরুল্লাহদের ছয় ভাই-বোন। ওয়ারিশ সূত্রে পরিবারের এ ছয়জন জমিজমার মালিক হন। সেটিই নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নিতেই দ্বারস্থ হন রায়গঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। কথা বলেন সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দৈনিক ৬০ টাকায় হাজিরার পিয়ন শাহাদতের সঙ্গে। তিনিই দলিল লেখার জন্য নিয়ে যান দলিল লেখক রিজওয়ান রশিদের কাছে। রিজওয়ান রশিদ এই বণ্টননামা দলিলের জন্য সব মিলিয়ে জমির মূল্য দাঁড়ায় ৩ কোটি ১৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।

সাব রেজিস্ট্রার সাগর দাস, অফিস পিয়ন শাহাদত ও দলিল লেখক রিজওয়ানের পরামর্শে তৃতীয় পক্ষ আবদুল মান্নানের মাধ্যমে সরকারি ফি বাবদ সোনালী ব্যাংক থেকে পে অর্ডার করেন তিন লাখ ১৪ হাজার ৬৩০ টাকার। সে মোতাবেক দলিল সম্পাদনও হয়, কিন্তু বিপত্তি বাধে দলিলের নকল তোলার পর। সেখানে উৎস করের জায়গায় ৩১ হাজার ৫৩০ টাকা লেখা থাকায় সন্দেহ করেন জাকির হোসেন।

পরের দিন জাকির হোসেন সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে কোনো পাত্তা পান না শাহাদত ও রেজওয়ানের কাছে। পরে সাংবাদিকদের সহযোগিতায় ব্যাংক স্টেস্টম্যান তুলে দেখা যায়, তার পে-অর্ডারের পুরো টাকা ক্যাশ করে তুলে নেয়া হয়েছে। সরকারের কোষাগারে জমা পড়েনি এক টাকাও। তখন তার পে-অর্ডারের টাকার হদিস পাওয়ার জন্য সহযোগিতা চান সংবাদকর্মীদের কাছে। আর অভিযোগ করেন আইন ও বিচার বিভাগ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছেও।

সাব রেজিস্ট্রি অফিসের আইন অনুযায়ী, ওয়ারিশান বণ্টন, দানপত্র দলিলে কোনো উৎস করই দিতে হয় না। অথচ এই অফিসে সব দলিলে নেয়া হয় উৎস কর। তাই সোনালী ব্যাংক থেকে গত এক মাসে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নামে ওয়ারিশান বণ্টন এবং দানপত্র দলিলে উৎস করের পে অর্ডার ক্যাশ হয়েছে ১৬টি। এর বিপরীতে নেয়া টাকার পরিমাণ ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৮৭০ টাকা।

এভাবেই প্রতি মাসে এ অফিস থেকে ওয়ারিশান বণ্টন এবং দানপত্র দলিলের নামে নেয়া উৎস করের টাকা উত্তোলন করে চক্রটি বণ্টন করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগী দাবি করা মতিউর রাহমান নামের আরেক বলেন, ‘ওয়ারিশ বণ্টননামায় ফি প্রয়োজন নেই এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। আমাদের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করেছে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের একটি চক্রটি।

‘আর এমন ঘটনা এখানে ঘটছে অহরহ। আমার পরিবারের ভাই-বোনদের সঙ্গে জমিজমা বণ্টন দলিলে নেয়া হয়েছে উৎসে কর। অথচ আজ জানতে পারলাম, এই দলিলে কোনো উৎস কর দিতে হয় না। আমি আমার পে-অর্ডারের টাকা ফেরত চাই।’

এই চক্রের সদস্য হিসেবে পরিচিত রায়গঞ্জ রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবিশ সিয়াম হোসেন বলেন, ‘ভুল করে আমি উৎসে করের বিষয়টি এই দলিলে উল্লেখ করেছি। আসলে ওয়ারিশান বণ্টন এবং দানপত্র দলিলের পে-অর্ডারের কথা লিখতে হয় না। কারণ এই দলিলে কোনো উৎস কর নেয়ার বিধান নেই।’

পে অর্ডারকারী মান্নান বলেন, ‘আমি পে অর্ডার তৈরি করলেও টাকা নগদায়ন করিনি। আমাকে অফিসের পিয়ন শাহাদত আর দলিল লেখক রিজওয়ান যেভাবে বলেছে সেইভাবেই কাজ করেছি। টাকা উত্তোলন করে শাহাদতের কাছে দেয়া হয়েছে। এরপর কী হয়েছে আমি জানি না।’

আর দলিল লেখক রিজওয়ান রশিদ সাব রেজিস্ট্রারের সামনেই জানান, সাব রেজিস্ট্রারের নির্দেশেই তিনি উৎস করের পে -অর্ডার করতে দলিলগ্রহীতাদের বলেছেন। দলিল শেষে পে-অর্ডার নগদায়ন করে সাব রেজিস্ট্রারকে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এ টাকা কী হয়েছে তা তিনি জানেন না, তবে এই অফিসে উৎস কর ছাড়া কোনো দলিল হয় না।

এই চক্রের হোতা হিসেবে পরিচিত অফিস পিয়ন শাহাদত বলেন, ‘পে-অর্ডারের পেছনে সাব রেজিস্ট্রারের আর পে-অর্ডারকারীর স্বাক্ষর থাকে। আমি এসবের কিছুই জানি না। আমাকে স্যার যেভাবে বলে আমি সেইভাবেই কাজ করি। এখানে অনেক কিছুই হয়। সবকিছু আপনাদের বলতে পারব না।’

রায়গঞ্জের সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এমদাদুল হক বলেন, ‘মূলত রেজিস্ট্রি অফিসের হাতেগোনা কয়েকজন এই পে-অর্ডারগুলো করেন। কখনও পে-অর্ডার নগদায়নের প্রয়োজন হলে উনারাই আবেদন করে নিয়ে এসে নগদায়ন করেন। যদিও এই টাকা নগদায়ন করার বিধান কোনো কাগজে নাই, তবে সাব রেজিস্ট্রারের সঙ্গে মৌখিক চুক্তিতে এগুলো করা হয়।’

রায়গঞ্জের সাব রেজিস্ট্রার সাগর দাস বলেন, ‘সপ্তাহে আমি দুই দিন এখানে অফিস করার কারণে অফিস স্টাফদের ওপরে আমার ভরসা করতে হয়। সে কারণে এখানে কোনো চক্রও গড়ে উঠতে পারে। সেটি আমি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।

‘আর ওয়ারিশান বণ্টন এবং দানপত্র দলিলের জন্য কখনোই আমি উৎস কর নিতে বলিনি। কারণ এই কর নেয়ার কোনো বিধান নেই। কীভাবে পে-অর্ডার নগদায়ন করা হয় তা আমার জানা নেই। আমি এই চক্রের সঙ্গে জড়িত না।’

সিরাজগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কয়েক দিন আগে এমন একটি অভিযোগের অনুলিপি আমি পেয়েছি। রায়গঞ্জ অফিসে ওয়ারিশান বণ্টন এবং দানপত্র দলিলের জন্য এক ভাগ উৎস কর নেয়া হয়। আসলে কোনোভাবেই এ কর নেয়ার বিধান নেই। আর সরকারি কোষাগারের জন্য পে-অর্ডার নগদায়ন কীভাবে করে আমার জানা নেই। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর