ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে একসঙ্গে ৫ নবজাতক জন্ম দেয়ার পরও শূন্য কোলেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে গৃহবধূ মানসুরাকে। একে একে চার শিশুর মৃত্যুর পর ঢামেক হাসপাতালের ২১১ নম্বর নবজাতক ওয়ার্ডে দীর্ঘ ২৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর পঞ্চমজনেরও মৃত্যু হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গত ১২ অক্টোবর সকালে ১০টার দিকে স্বাভাবিকভাবে একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের জন্ম দেন মানসুরা বেগম নামের ২২ বছর বয়সী এক গৃহবধূ। এদের মধ্যে একটি পুত্র ও চারটি কন্যা নবজাতক। জন্মের কিছু সময় পর এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। সেদিন রাতে আরও এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। পরদিন শুক্রবার চলে যায় আরও দুইজন। ফলে চার কন্যা সন্তানের সবাইকে হারিয়ে একমাত্র পুত্রসন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকেও বাঁচানো যায়নি।
ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার সাবিহা সুলতানা বলেন, ‘নবজাতকগুলো অপূর্ণ অবস্থায় জন্ম নেয়। সর্বশেষ যে পুত্র নবজাতকটি চিকিৎসাধীন ছিল, তার ওজন ছিল মাত্র ৯০০ গ্রাম। তাকে বাঁচিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছিল।
মানসুরা নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বান্ধারিয়া গ্রামের মামুন মিয়ার স্ত্রী। তার স্বামী মামুন পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক।
১২ অক্টোবর সকাল আটটার দিকে ঢামেক হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি হন মানসুরা। পরে ওইদিন সকাল ১০টার দিকে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করেন তিনি।
নিউজবাংলাকে মনসুরা আক্তার জানান, আড়াই বছর আগে সিএনজি অটোচালক মামুনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এটিই তাদের প্রথম সন্তান। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তিনি। মাসিক খানেক আগে নিয়মিত চেকআপের জন্য শিবপুরের একটি ক্লিনিকে গিয়ে জানতে পারেন, তার গর্ভে পাঁচটি সন্তান রয়েছে। পরে সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শে ঢামেক হাসপাতালে এসে একসঙ্গে পাঁচটি নবজাতকের জন্ম দেন তিনি।
বিলাপের সুরে তিনি বলেন, ‘ভাইরে, সে কথা জিগাইয়া আর আমার বুকের ব্যথা বাড়ায়েন না। আমার মানিক ধনগুলি একে একে সবই আল্লায় লইয়া গেল। যদি একটাও আল্লায় বাঁচাইয়া রাখত, তাও মনেরে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। অহন এই কথা কইয়া কী হইব! আল্লাহ গো, তুমি দিলা ক্যা, আবার নিয়া গেলা ক্যা?’