বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সাম্প্রতিক বক্তব্যে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নেই বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শনিবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা ও জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তুলে ধরার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানান।
রিজভী বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে চীন সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন দেখতে চায় বলে রাষ্ট্রদূত ওয়েন যে মন্তব্য করেছেন তাতে জনগণের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি।
‘চীনা রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের প্রয়াসে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছে।’
তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের জনগণের একটি বড় অংশ ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। তাই দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অধীনে নয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চায়।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘চীন চায় সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এবং সংশ্লিষ্ট দলগুলো তাদের মতবিরোধ নিরসন করে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখুক।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ওয়েনের বক্তব্য বিএনপি ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
‘আমরা বাংলাদেশ সম্পর্কে তার উদ্বেগকে স্বাগত জানাই। একইসঙ্গে আমরা তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনকারী দল বিএনপি সবসময় সংবিধানের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, যা জনগণ কর্তৃক অনুমোদিত ও গ্রহণযোগ্য।’
তিনি বলেন, ‘এটা দুঃখজনক যে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার প্রয়াসে বিতর্কিত সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তন করেছে।
‘জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সুস্বীকৃত ও বহুল প্রশংসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকার হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিলুপ্ত করেছে।’
রিজভী বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালে পরপর দুটি প্রহসনমূলক জাতীয় নির্বাচন স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি চিহ্নিত অংশ নির্বাচনের নামে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগীর ভূমিকা পালন করে।’
বাংলাদেশ ও চীন দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্ঞান ও অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের ভিত্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বাস করে যে কূটনৈতিক সাফল্য দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের মধ্যে নিহিত।
বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের চলমান আন্দোলনে বিএনপি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সমর্থন প্রত্যাশা করে।
‘বিএনপি গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি পুনরুদ্ধার করতে চায়- যাতে বাংলাদেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।’