বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খুলনায় ১৭ লাখ মানুষের জন্য ১৯ পাবলিক টয়লেট

শহরের পাবলিক টয়লেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, সেগুলোর পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা। টয়লেটজুড়ে নোংরা পানি ছড়িয়ে ছিল। কোনোটার দরজায় ছিটকিনি নেই। পানির ট্যাপগুলো ভাঙা, অধিকাংশ ট্যাপ দিয়ে পানি পড়ে না। কোনো কোনো ট্যাপ দিয়ে পানি পড়লেও প্যানগুলোতে পানি আটকে থাকে। এ রকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে একান্ত বিপদে না পড়লে টয়লেট ব্যবহার করতে চান না কেউই।

দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর খুলনায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বাস। এ ছাড়াও দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন আশপাশের জেলা থেকেও আরও প্রায় দুই লাখ মানুষ হাজির হয় বিভাগীয় এ শহরে।

রোজকার প্রয়োজনে এত বেশিসংখ্যক মানুষের আনাগোনা হলেও তাদের ব্যবহারের জন্য শহরে পাবলিক টয়লেট রয়েছে ১৯টি। এসব পাবলিক টয়লেটর সবই যে শহরবাসী ব্যবহার করতে পারছেন, তা কিন্তু নয়।

এগুলোর অধিকাংশই অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। এ ছাড়া অন্তত পাঁচটি টয়লেট শুধু বিভিন্ন বাজারের মাংস বিক্রেতারা ব্যবহার করেন। আর তিনটি পশুর বাজারের জন্য নির্ধারিত, যা শুধু ঈদের সময় চালু করা হয় এবং বছরের বাকি সময় বন্ধ থাকে।

শহরের পাবলিক টয়লেটে ঘুরে দেখা যায়, এগুলো রূপসা বাস টার্মিনাল, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল, বিএল কলেজ গেট এবং বয়রাবাজার এলাকার ১২ বর্গকিলোমিটার সীমানার মধ্যে অবস্থিত। যদিও খুলনা শহরের আয়তন ৪৬ বর্গকিলোমিটার।

শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরে সেখানে কোনো পাবলিক টয়লেট পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে রয়েছে ফুলবাড়ী গেট, শিরোমণি, গল্লামারি, টুটপাড়া, খালিশপুর, চানমারি, রেলিগটের মতো জনবহুল এলাকা।

শহরের মিস্ত্রিপাড়া বাজার, নতুন রাস্তা মোড়, সোনাডাঙ্গা ট্রাক টার্মিনাল, শেখপাড়া বাজার ও জোড়াগেটের পাবলিক টয়লেট পরিদর্শন করেন এ প্রতিবেদক।

পাবলিক টয়লেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, সেগুলোর পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা। টয়লেটজুড়ে নোংরা পানি ছড়িয়ে ছিল। কোনোটার দরজায় ছিটকিনি নেই। পানির ট্যাপগুলো ভাঙা, অধিকাংশ ট্যাপ দিয়ে পানি পড়ে না। কোনো কোনো ট্যাপ দিয়ে পানি পড়লেও প্যানগুলোতে পানি আটকে থাকে। এ রকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে একান্ত বিপদে না পড়লে টয়লেট ব্যবহার করতে চান না কেউই।

শহরের বিএল কলেজের সামনে একটি পাবলিক টয়লেটের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করেন জাহাঙ্গীর হোসেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টয়লেটটি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন মানুষ ব্যবহার করেন। এর মধ্যে থাকেন চার থেকে পাঁচজন নারী। পাবলিক টয়লেটগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের জন্য ৫ টাকা, পায়খানার জন্য ১০ টাকা ও গোসল করার জন্য ২০ টাকা করে প্রদান করতে হয়।

তিনি বলেন, ‘নিয়ম মোতাবেক খুলনা সিটি করপোরেশনের কর্মীরা এগুলো পরিষ্কার করবে, তবে কখনও কোনো কর্মী এসে এটি পরিষ্কার করেন না। বাধ্য হয়ে মাঝে মাঝে আমি নিজেই পরিষ্কার করি।’

পার্শ্ববর্তী দোকানের মালিক আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এ মার্কেটের পাশে যে পাবলিক টয়লেটটি আছে, সেটা আমরা নিজেরাই ব্যবহার করি না। এত বেশি নোংরা যে, একজন মানুষ সেখানে পাঁচ মিনিট অবস্থান করলে নিশ্চিত অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই টয়লেটের প্রয়োজন হলে দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যাই আমি।’

এ বিষয়ে চাইলে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) এস্টেট অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ১০টি পাবলিক টয়লেট পরিচালনা করে। বাকিগুলো নিয়মিত ইজারাদারদের রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা ছিল, কিন্তু সেভাবে দেখভাল করে না তারা।’

এ নিয়ে কোনো ইজারদার সরাসরি বক্তব্য দিতে রাজি হননি, তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইজারদার জানান, টয়লেটগুলো ইজারা নেয়ার পর তারা তেমন কোনো লাভ পাননি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ হওয়ার কারণে কেউ তেমন ব্যবহার করতে চান না এগুলো। তাই এ নিয়ে তাদের কাজের ক্ষেত্রেও তেমন আগ্রহ নেই।

শহরে নারীদের জন্য টয়লেট ব্যবহার অত্যন্ত কঠিন বলে জানান আইনজীবী শামীমা সুলতানা শিলু। তিনি বলেন, ‘নারীদের জন্য ভালো টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা নেই শহরে। যা আছে, সেগুলোতে একজন নারী গিয়ে ব্যবহার করার মতো অবস্থাও নেই।’

পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিতের বিষয়টি পৌর আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি খুলনার বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল।

তিনি বলেন, ‘স্যানিটেশনের আইন ও বিধিমালা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা খুলনা শহরজুড়ে মানা হচ্ছে না। ফলে জনসাধারণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেসিসির মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘আমাদের কিছু উন্নত ও নারীবান্ধব পাবলিক টয়লেট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি দ্রুত আমরা এ কাজ শুরু করতে পারব।’

এ বিভাগের আরো খবর