রাজধানীর পুরান ঢাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। লাল ইটের বাতিঘর খ্যাত এই বিদ্যাপীঠটি ১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয়।
শিক্ষক সংকটসহ ভৌত অবকাঠামোগত বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে কলেজটি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের ৭৪ বছর পূর্ণ করেছে।
৭৪ বছরের ইতিহাস
১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বর নালগলার জুম্মন ব্যাপারী লেনের ভাওয়াল রাজ এস্টেটে কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর উপাধি অনুসারে শুরুর দিকে এই কলেজটির নাম রাখা হয়েছিল ‘কায়েদ-ই-আজম কলেজ’। পরবর্তী সময় লক্ষ্মীবাজারে জমি ক্রয় করে কলেজটিকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়। আর নালগলার ভবনটিকে ছাত্রাবাসে রূপান্তর করা হয়।
১৯৫০ সালে সৈয়দ জহির আহসান কলেজটির প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামানুসারে কলেজটির নাম রাখা হয় ‘শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ’।
১৯৮৪ সালের পহেলা নভেম্বর কলেজটি সরকারি কলেজে পরিণত হলে এর নাম হয় ‘সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ’। ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজটিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করা হয়। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ও শিক্ষার গুণগত উন্নয়নের জন্য ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার যে সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।
এই কলেজটিতে বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নের ব্যবস্থা রয়েছে। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পরই শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত বদলাতে থাকে পুরো পুরান ঢাকার চিত্র। কিন্তু সেই সোহরাওয়ার্দী কলেজই এখন নানা সংকট আর সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সংকট আর সমস্যা
সোহরাওয়ার্দী কলেজের ক্যাম্পাস এক একরের কিছু বেশি।
শিক্ষার্থীরা জানান, ক্যাম্পাসটিতে লাইব্রেরির জন্য আলাদা কোনো ভবন বা সুপরিসর কক্ষ নেই। কলেজ লাইব্রেরিতে ক্যাটালগ নেই, বই ইস্যু এবং ফেরত নেয়ার ব্যাপারেও অব্যবস্থা বিদ্যমান। নেই ক্লাস নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা, যেগুলো আছে তাও আবার আয়তনে পর্যাপ্ত নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও নানা রকম অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় হতাশ শিক্ষার্থীরা।
সাত কলেজের মধ্যে ছয়টিতেই রয়েছে একাধিক আবাসিক হল, কিন্তু সোহরাওয়ার্দী কলেজে নেই কোনো হলের ব্যবস্থা।
আবাসিক এই সমস্যার সমাধান কবে মিলবে তা আদতে কেউ জানেন না।
কলেজ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ আসে গ্রামের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আশপাশের এলাকায় মেস বা বাসা ভাড়া করে শুধু পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া তাদের অধিকাংশের পক্ষে সম্ভব হয় না।
একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বাধ্য হয়ে খণ্ডকালীন চাকরিতে যোগ দিতে হচ্ছে তাদের। এ জন্য তারা পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন না। তাই ব্যাহত হচ্ছে তাদের পড়াশোনা।
অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের কোনো নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নেই জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ঢাকার অদূরের শিক্ষার্থীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। তারা চায় দ্রুত যেন এই সমস্যার সমাধান হয়।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলেজের জায়গা বৃদ্ধিকরণ, ডি.আই.টি. মার্কেটে হল নির্মাণ, কলেজে খেলার মাঠ সম্প্রসারণ করা, যাতায়াতের জন্য কলেজের বাসের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করা, লাইব্রেরি সংস্করণ করা, ক্যাম্পাসে ক্যান্টিন চালু করাসহ দীর্ঘ দিন ধরেই বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে আসছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের নানা অধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ ও সম্প্রতি ‘ছাত্র অধিকার পরিষদ’ ব্যতীত ক্রিয়াশীল কোনো ছাত্র সংগঠন নেই।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি স্থিতিশীল হলেও শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ সংগঠনগুলো।
কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোহসিন কবীর বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে জায়গা ও স্থাপনা। কলেজটির এত বছর পেরিয়ে গেলেও ভৌত অবকাঠামোর সমস্যা সমাধান হয়নি। আর আমাদের কলেজে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পদ নেই। তবুও শিক্ষামন্ত্রী আমাদের কলেজের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য মাউশি থেকে কিছু অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’
কলেজটি নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা শিফট করে ভাগ করে ক্লাস পরীক্ষা নিচ্ছি। আমাদের অতি শীঘ্রই একটি ভবন প্রয়োজন। সে জন্য আমরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আলাপ আলোচনা করে নতুন জায়গার জন্য চেষ্টা করছি যেন আমাদের সংকটগুলো কিছুটা হলেও দূর করা যায়।’
শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক সংকট
কলেজটিতে বর্তমানে তিনটি অনুষদে সর্বমোট ১৭টি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলে জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘদিন যাবত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকলেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। যার ফলে প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম।
কলেজ প্রশাসনের দাবি, তুলনামূলক অবকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পর্যাপ্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছেন না তারা।
বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী, ১০১ জন শিক্ষক ও বিভিন্ন অনুষদের ১৭টি বিভাগ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজটির বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। কলেজটিতে প্রতিটি বিভাগে অনার্সের চারটি শিক্ষাবর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন খুবই নগণ্য।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসলিমা তাসরিন জানায়, ‘বর্তমানে আমাদের বিভাগে দুইজন শিক্ষিকা রয়েছেন এবং একজন অতিথি শিক্ষক রয়েছেন। আমাদের নন-মেজর বিষয়ের ক্লাসগুলো অন্য ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে হলেও মেজর বিষয়গুলোর ক্লাস ঠিকভাবে হয় না। রুটিন অনুযায়ী সময়মতো ক্লাস হয় না।’
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র পারভেজ তানবিন বলেন, ‘একজন অতিথি শিক্ষকসহ ডিপার্টমেন্টে মাত্র চারজন শিক্ষক। ক্লাস ঠিকভাবে হয় না। এত বড় ডিপার্টমেন্টে মাত্র তিন থেকে চারজন শিক্ষক কীভাবে ঠিকভাবে ক্লাস নিবেন।’
ইসলাম শিক্ষা বিভাগে শিক্ষার্থী মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মাত্র পাঁচজন শিক্ষক। এই পাঁচ শিক্ষকই ইন্টারমিডিয়েট, অনার্স-মাস্টার্সের কাস নিয়ে থাকে।’
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মোহসিন কবীর বলেন, ‘শিক্ষকদের স্থায়ী যে পদ তা আমাদের কলেজে অনেক কম। বিষয়টি আমি শিক্ষামন্ত্রীকে অবগত করি। উনি বিষয়টি অনুধাবন করেন এবং যেহেতু পদ সৃষ্টি অনেক জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, তাই বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে সংযুক্তির মাধ্যমে বাইরে থেকে বেশ কিছু শিক্ষক দিলে এখন শিক্ষক সংখ্যা আগে তুলনা দ্বিগুণ হয়েছে। এর পরও কয়েকটি বিষয়ে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক স্বল্পতা স্বল্প সময়ের মধ্যেই সাময়িকভাবে নিরসন করেছেন এ জন্য শিক্ষামন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী কলেজের পক্ষ থেকে সাধুবাদ এবং আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ সময়কালের সব থেকে যোগ্য অভিভাবকগণ উপস্থিত রয়েছেন। উনারা এ কলেজের শিক্ষক সংখ্যাসহ শিক্ষকের স্থায়ী পদের সংখ্যাও খুব দ্রুত বৃদ্ধি করবেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। আশা করি তাদের যুগ্ম সহযোগিতায় আমরা এ সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে পারব।’
কলেজে নেই পরিবহন সুবিধা
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রতিষ্ঠার ৭৪ বছরেও শিক্ষার্থীদের পরিবহন ব্যবস্থা করতে পারেনি কলেজ প্রশাসন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত তিতুমীর কলেজ ৯টি, ঢাকা কলেজ আটটি, ইডেন মহিলা কলেজে ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে চারটি, কবি নজরুল সরকারি কলেজ দুইটি এবং বাঙলা কলেজে একটি বাস রয়েছে।
সরকারি সাতটি কলেজের ছয়টি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নিজস্ব বাস থাকলেও সোহরাওয়ার্দী কলেজে যাতায়াতের জন্য কোনো বাস নেই।
এদিকে কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার।
অনেকেই উত্তরা, খিলগাঁও, বাড্ডা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর থেকে যাতায়াত করে। ক্যাম্পাসের নিজস্ব বাস না থাকায় রাস্তায় অনেক শিক্ষার্থীকেই দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে প্রায়সময়ই অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাস্তায় যানজটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে হয়। রাস্তায় যানজটের কারণে অনেকে ঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। আবার অনেকে পরীক্ষা কিংবা ল্যাব ক্লাস থাকলে আসতে দেরি করে ফেলে। কেউ কেউ সকাল ৯টার ক্লাস করার জন্য সকাল ছয়টায় বাসা থেকে বের হয়েও ক্লাসে এসে দেখে ক্লাস শেষ হয়ে গেছে।
দর্শন বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবাইদা আমান লিজা বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে নিয়মিত ক্লাস করতে আসি। সকালে আমি বাসা থেকে অটোরিকশা করে নদীর ঘাট পর্যন্ত যাই। তারপর নদী পার হই। সেখান থেকে একটা বাসে করে নতুন বাজার যাই। পরে নতুন বাজার থেকে বাসে করে সদরঘাট যাই। আবার সেখান থেকে হেঁটে কলেজ পর্যন্ত আসি।
‘যাতায়াত করতে খুবই সমস্যা হয়, আসা যাওয়া মিলিয়ে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ব্যয় হয়। ক্লাস করার জন্য সকাল ৬টায় বের হই এবং ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরতে রাত ৮টা বেজে যায়।’
গাজীপুর থেকে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে ক্লাস করেন কলেজের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুজ্জামান খান ইমরান।
তিনি বলেন, ‘অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের মধ্যে আমাদের কলেজ সব দিক থেকে অবহেলিত। বাকি ছয়টি কলেজ বাস থাকলেও আমাদের কলেজে নাই। বাস না থাকায় প্রতিদিন ক্লাস করতে পারি না।
‘একদিন ক্লাস করতে আসলে বাসায় যেয়ে খুবই ক্লান্ত হয়ে যাই। আসা-যাওয়া করতে যানজটের জন্য অনেক সময় লেগে যায়। কলেজ বাস পেলে আমাদের অনেক সুবিধা হতো।’
সাভার থেকে ক্লাস করতে আসা ফিওনা এশা সরকার জানান, ‘বাসে হাফ ভাড়া নিতে চায় না। আইডি কার্ড দেখানো হলেও দুর্ব্যবহার করে। মেয়ে শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে বাসে নিতেও আপত্তি করে, দাঁড়িয়ে ধাক্কা কিংবা ঠেলাঠেলি করে আসতে হয়। প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে প্রায় সময় লাগে সাত থেকে আট ঘণ্টা।’
কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. মোহসিন কবীর পরিবহন সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের সব সমস্যার মূলে হলো জায়গার সংকট। আমাদের আগে জায়গার সংকট নিরসন করতে হবে। এই জায়গার সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যদি দুইটি বাস আনা হয় তাহলে দুইটা চালক, দুইটা হেলপার লাগবে। গাড়ি রাখার জন্য একটা গ্যারেজ লাগবে, কিন্তু এখানে গ্যারেজ তৈরি করার মতো জায়গা নেই।
‘আর ক্যাম্পাসে বাস আনলে হয়ত ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী যাতায়াত করতে পারবে। কিন্তু বাকি ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীই সুযোগ পাবেনা।’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘বাস আনলে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দেয়া লাগবে। অনেকেই ক্যাম্পাসের আশপাশের মেসে থাকে, তারা বলবে আমরা তো বাসে চড়ি না, তাহলে আমরা কেন চাঁদা দেব। এসব দিকও আমাদের বিবেচনা করতে হবে।’
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেই কোনো আয়োজন
কলেজটির ৭৪ বছর পূর্তি এবং ৭৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষেও কোনো আয়োজন হবে না বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোহসিন কবীর।
তিনি বলেন, ‘কলেজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অনুষ্ঠান করতে হবে এমন কোনো রেওয়াজ নেই। ৫০ বছর কিংবা ১০০ বছর পূর্তিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠান হয়।’
শিক্ষার্থীরা জানান, এত পুরোনো একটা প্রতিষ্ঠান অথচ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে না, বিষয়টি মানা যায় না। ছোটখাটো করে হলেও একটা কিছু করার প্রয়োজন ছিল।
আরেক শিক্ষার্থী জবা চৌধুরী বলেন, ‘সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও আমাদের উচিত কলেজে অনুষ্ঠান করা। অত বড় পরিসরে না পারলেও ছোট করে করা। কারণ ছোট প্রোগ্রামগুলো সবাই একত্রে হলে সবার মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। কলেজের সবাই তো একটা পরিবারের মতোই।’