বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নওগাঁয় ঠিকাদারের গাফিলতিতে দুর্ভোগে জনসাধারণ

  • প্রতিনিধি, নওগাঁ   
  • ১০ নভেম্বর, ২০২৩ ১৮:৪৯

মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজ ও জয়েন্ট ভেঞ্চারের ঠিকাদার খলিলুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, ‘ভাল মানের উপকরণ দিয়েই রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কাজের একটি টাকাও আমাকে দেয়া হয়নি। আর টাকা না পেলে কাজ করবো কী দিয়ে। উপজেলা প্রকৌশলী আমার সঙ্গে বারবার ঝামেলা করার চেষ্টা করছেন। তাকে হুমকি-ধামকি দেয়ার বিষয়টিও মিথ্যা।’

নওগাঁয় ঠিকাদারের গাফিলতিতে একটি সড়কের কাজ নির্ধারিত সময়ের পরও শেষ হয়নি। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারী ও এলাকাবাসীদের। চুক্তির মেয়াদ দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি কাজ, আদৌ কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ঠিকাদারকে কাজ শেষ করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিএডি) থেকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রকৌশলীকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তবে রাস্তার কিছু কাজ করা হলেও কোনো টাকা দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন নওগাঁর মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজ ও জয়েন্ট ভেঞ্চার এর ঠিকাদার খলিলুর রহমান।

নওগাঁ সদর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগ (সিরাজগঞ্জ জেলা ব্যতিত) পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে সদর উপজেলার হাঁপানিয়া বাজার থেকে জেলার বদলগাছী উপজেলার প্রধানকুন্ডি এলাকা পর্যন্ত সাত দশমিক ৩৭৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হয়। যার চুক্তিমূল্য ধরা হয় তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী কাজটি শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে।

কাজ শেষ হওয়ার সময় পেরিয়ে গেছে এক বছর আট মাস আগে। সঠিক নির্মাণ পদ্ধতিতে কাজ করতে ঠিকাদারকে পরপর সাতটি চিঠি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ তাকে চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর চিঠি দেয়া হয়।

হাঁপানিয়া জিসি-মাতাজিহাট জিসি রাস্তাটি সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল এক বছর আট মাস আগে। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই ঠিকাদার গড়িমশি শুরু করে। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করতে গিয়ে বার বার বাধার মুখে পড়তে হয় ঠিকাদারকে।

এলাকাবাসীসহ সদর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগও তার ওপর বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষিপ্ত। বারবার তাকে তাগাদা দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অবেশেষে আর কাজ না করেই কাজটি ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। কাজ পড়ে থাকায় শুরু হয়েছে জনদূর্ভোগ। দ্রুত এর প্রতিকার চান স্থানীয়রা।

চক আতিথা উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, এ রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়ায় করতে হয় তাদের। বিশেষ করে ট্রাক ও ট্রাক্টর যখন এ রাস্তা দিয়ে যায় তখন রাস্তার ধুলায় জামা-কাপড় নোংরা হয় শিক্ষার্থীদের। ধুলার কারণে হাঁছি ও কাঁশি হয়। এমনকি শ্বাসকষ্ট শুরু হয় অনেকের।

শিক্ষার্থীদের দাবি, দ্রুত এ রাস্তার কাজ শেষ করে চলাচলের উপযোগী করা হোক।

কসবা গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এই রাস্তায় দিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতে হয়। দীর্ঘদিন রাস্তাটি পড়ে থাকায় মধ্যে মধ্যে খোয়া উঠে গর্ত হয়ে গেছে। ঝুাঁকুনিতে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। রোগীদের জন্য আরও বেশি কষ্টের এ রাস্তা ব্যবহার করা। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে রাস্তাটি কাজ করার চেষ্টা করা হয়েছে বলেই এমন অবস্থা।’

বর্ষাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান আলী বলেন, ‘রাস্তার কাজ হচ্ছে-হবে এমন অবস্থা। কবে শেষ হবে তা আমরা কেউ জানি না। তবে রাস্তা এভাবে ফেলে রাখার কারণে জনদূর্ভোগ বাড়ছে। রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া-আসা করলে জামা-কাপড়ে ধুলার স্তুপ জমে যায়। পুরাতন যে ইট ও পাথর ছিল সেগুলো পুনরায় ধামাচাপা দিয়ে রাস্তায় বিছানো হয়েছে।’

বর্ষাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদার কাজ ঠিকমতো না করে দীর্ঘদিন থেকে ফেলে রেখেছে। পুরাতন ইট ভেঙ্গে রাস্তায় দেয়া হয়েছে। কাজের মান ভাল না মোটেই।’

এ বিষয়ে মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজ ও জয়েন্ট ভেঞ্চারের ঠিকাদার খলিলুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, ‘ভাল মানের উপকরণ দিয়েই রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কাজের একটি টাকাও আমাকে দেয়া হয়নি। আর টাকা না পেলে কাজ করবো কী দিয়ে। উপজেলা প্রকৌশলী আমার সঙ্গে বারবার ঝামেলা করার চেষ্টা করছেন। তাকে হুমকি-ধামকি দেয়ার বিষয়টিও মিথ্যা।’

নওগাঁ সদর উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাস্তা ও ঠিকাদারকে নিয়ে ভীষণ বিড়ম্বনার মধ্যে আছি। ঠিকাদার সঠিক নির্মাণ পদ্ধতিতে কাজ না করে রাতের আধারে নিম্নমানের মালামাল নিয়ে এসে নিজের মতো করতে চাইছেন। কাজটি শেষ করার জন্য তাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কাজ শেষের মেয়াদও প্রায় দেড় বছর পার হয়েছে। পর পর সাতটি চিঠি দেয়া হযেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর তাকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তিনি কাজ করছেন না। এখনো দুই ইঞ্চি উঁচু করে খোয়া ফেলতে হবে। তবে মাত্র দুই কিলোমিটারে ডব্লিউবিএম কাজ করা হয়েছে। তারপর পাকাকরণ করতে হবে। কেন এমন কাজ করছেন তা তিনিই ভাল জানেন।’

ঠিকাদারকে কাজের কোনো টাকা এখনো দেয়া হয়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে চান। নিয়মবহির্ভূতভাবে বেড তৈরিকরণ, এজিং, হার্ডবেড তৈরিকরণ ও ডব্লিউবিএম কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু আমরা তাকে এমন কাজে বাঁধা দেই। বাঁধা দেয়ায় তিনি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত। আমার অফিস স্টাফদের সঙ্গেও তিনি খারাপ ব্যবহার করেন। এমনকি জোরপূর্বক কাজের বিল নেয়ার জন্য অফিসে এসেও হুমকি-ধামকি দিয়েছেন তিনি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারন ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তবে কাজটি ফেলে রাখায় জনদুর্ভোগ শুরু হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর