পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীর রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের সপ্তম ও শেষ চালান রূপপুর পৌঁছেছে।
বিশেষ নিরাপত্তায় সড়কপথে শুক্রবার সকাল ৭টা ৩৪ মিনিটে ইউরেনিয়ামের গাড়িবহর রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
পাকশী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আশীষ কুমার স্যানাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার সকালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় ইউরেনিয়ামের গাড়িবহর প্রবেশ করলে কর্মরত বাংলাদেশি ও রাশিয়ান কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা দুইদেশের জাতীয় পতাকা ও বেলুন উড়িয়ে স্বাগত জানান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাশিয়া থেকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে আসে ইউরেনিয়ামের শেষ এ চালান। বিশেষ নিরাপত্তায় ঢাকা থেকে এই ইউরেনিয়ামের চালান শুক্রবার রাত ২টার দিকে রূপপুরের উদ্দেশে রওনা হয়।
এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িগুলো আনার সময় মহাসড়কে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তাবলয় ছিল। নিরাপত্তার জন্য সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দুই ঘন্টা পাবনা-নাটোর-কুষ্টিয়া মহাসড়ক দিয়ে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল।
রূপপুর পারমাণবিকের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে রাশিয়া থেকে সপ্তম এবং শেষ চালানের ইউরেনিয়াম বিশেষ বিমানে ঢাকায় পৌঁছায়। ছয়টি চালানের মতোই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে আমদানিকৃত পারমাণবিক জ্বালানি সড়ক পথে রূপপুরে নেয়া হয়। এই সাতটি চালানে আসা জ্বালানি দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে এক বছর ২,৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।
অপরদিকে প্রথম চালান আসার পর রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি এরই মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনায় উন্নীত হয়েছে। রূপপুর এখন আর প্রকল্প নয়।
প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর আরও জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কিন্তু এখন একটি পারমাণবিক স্থাপনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পারমাণবিক জ্বালানি সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজে সব ধরনের যন্ত্রপাতি বসানো শেষ হয়েছে। রাশিয়া প্রতিটি মালামাল ও যন্ত্রপাতি আমাদের এখন বুঝিয়ে দিচ্ছে। এখন কমিশনিং শুরু হবে।
তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সনদ লাভের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলও প্রস্তুত করে তাদের পদায়ন করা হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ সব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। কোথাও কোনো ফাঁক রাখা হয়নি। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ারও সুযোগ নেই।’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রূপপুরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে জ্বালানি ব্যবহার হবে, তা চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া তিন বছর বিনামূল্যে সরবরাহ করবে। প্রতিদিন জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। একবার জ্বালানি লোডের পর প্রথম তিন বছরের জন্য বছরে একবার করে (এক-তৃতীয়াংশ) এবং পরবর্তী সময়ে দেড় বছর পরপর জ্বালানি পরিবর্তন করতে হবে। ফলে জ্বালানির কারণে দেশের অন্যান্য কেন্দ্র যেভাবে বন্ধ থাকে, এখানে ওই ধরনের কোনো সংকট হবে না। নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রথম চালানের জ্বালানির আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় চালানের জ্বালানি রাশিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে।
এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাশিয়া থেকে ঢাকায় আসার পর ২৯ সেপ্টেম্বর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান ঢাকা থেকে ঈশ্বরদীর রূপপুরে পৌঁছে। ৫ অক্টোবর প্রথম চালানটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
এরপর ৬ অক্টোবর ইউরেনিয়ামের দ্বিতীয় চালান, ১৩ অক্টোবর তৃতীয়, ২০ অক্টোবর চতুর্থ চালান, ২৭ অক্টোবর পঞ্চম চালান ৩ নভেম্বর ৬ষ্ঠ চালান রূপপুরে পৌঁছায়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মত, ২০২৪ সালের মার্চে প্রথম ইউনিটে ১,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। পরের বছর ২০২৫ সালের মাঝামাঝি দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে পারে। দুটি ইউনিটে মোট ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।