দেশজুড়ে তিন দফা সর্বাত্মক অবরোধ যার ডেকেছে, তারাই নাশকতায় জড়িত বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে তিন দফা অবরোধ ডাকে বিএনপিসহ বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সর্বশেষ ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ শেষ হয় শুক্রবার সকাল ছয়টায়। এসব অবরোধের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাসসহ অন্যান্য গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
অবরোধ চলাকালে নাশকতার প্রসঙ্গ টেনে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহিদ উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে তিন দফায় অবরোধ দিয়েছে বিএনপি। এসব অবরোধ চলাকালে বিভিন্ন জায়গায় বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব নাশকতায় আগুনে পুড়ে মৃত্যুসহ বেশ কয়েকজন মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। যারা এ অবরোধ ডেকেছে, তারাই এসব নাশকতার সঙ্গে জড়িত।
তিনি বলেন, ‘এক দিনের হরতাল ও তিন দফা অবরোধের কারণে মহানগরবাসীর জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে ডিএমপি ইতিবাচক। এসব কর্মসূচির নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। সেই কাজটি আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করছি, কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, আমরা দেখেছি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রকাশিত ও অগ্রহণযোগ্য ঘটনা ঘটেছে।
‘এ সময় দুষ্কৃতকারীরা ঢাকা মহানগর এলাকায় ৬৪টি বাসে আগুন দিয়েছে। দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে দুষ্কৃতকারীরা বাসে আগুন দিয়েছে। এতে করে দ্রুত বাসে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৩১ অক্টোবর রাতে একজন হেলপারকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। রাজধানীর ১২টি স্থানে আগুন দেয়ার সময় ১২ জন দুষ্কৃতকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নাশকতার ক্ষেত্রে ডিএমপি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সকলকে একটি অনুরোধ করতে চাই, রাজনৈতিক কর্মসূচি হলে ডিএমপি তার জায়গা থেকে যা যা করার, তা করবে। কেউ যদি নাশকতা ও অগ্নিসংযোগ করে, তাহলে ডিএমপি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আমরা আশা করব সামনে রাজনৈতিক কর্মসূচি আসলে সেটা যেন ধ্বংসাত্মক না হয়। যারা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করে তারা যেন এসব না করে তাদের বলতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, এসব দুষ্কৃতকারীদের বিভিন্ন জায়গা থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদের দেয়ার পর তারা নির্বিচারে এসব নাশকতার কাজ করে। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি আগামী ১২ ও ১৩ নভেম্বর অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। আমরা সকলকে ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাব, কেউ যেন রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে গণধ্বংসাত্মক কার্যক্রম না করে।’
গ্রেপ্তার ১২ জনের রাজনৈতিক পরিচয় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে ১২ জনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, তারা প্রত্যেকেই অবরোধ কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এমন দেখা গেছে, একজন আরেকজনকে নিয়োগ করেছে। আবার আরেকজন অন্যজনকে নিয়োগ করেছে। তারা বিভিন্নভাবে অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে মানুষজনকে ভীত করার জন্য এবং মানুষ যেন ভয়ে রাস্তায় না নামতে পারে, সেই লক্ষ্যে তারা অবরোধের আগের দিন ও অবরোধের দিন নাশকতা করেছে।’
নাশকতার পেছনে টাকা-পয়সার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘টাকা-পয়সা লেনদেনের দুই-একটি তথ্য আমরা পেয়েছি। ছদ্মবেশে কেউ নাশকতা করে সেটিকে ১০০ ভাগ নিরাপত্তা দেয়া কঠিন। প্রতিদিন যে কয়েকটি ঘটনা ঘটছে, আমাদের মনে রাখতে হবে তার চেয়ে অনেক গুণ ঘটনার পরিকল্পনা কিন্তু প্রতিহত করা হয়েছে। না হলে নাশকতার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেত।’
টাকা-পয়সা নাশকতাকারীদের কোনো দলের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই। তাদের অনেক ক্ষেত্রে প্রলোভন দেয়া হয়েছে তোমার জায়গা যদি সুদৃঢ় রাখতে চাও, তাহলে এই কাজটি করে দাও। এই ধরনের অনেক তথ্য আছে।’
নাশকতায় ইন্ধন দেয়া রাজনৈতিক দল সম্বন্ধে জানতে চাইলে মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘যারা অবরোধের ডাক দিয়েছেন তারা এসব পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের লোক। তাদেরকে চিহ্নিত করার জন্য ও নাশকতাকারীদের পেছনে কারা, সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ এখন সচেতন। তারাও নাশকতা ঠেকাতে সোচ্চার। ইতোমধ্যে নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য একজনকে পুরষ্কৃত করা হয়েছে। বাকি আরও কয়েকজন আছে। তাদের বিষয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’