পাশাপাশি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নতুন নির্ধারিত মজুরি মেনে নিয়ে কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত যে নৈরাজ্য, আগুন-সন্ত্রাস এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা হরতাল ও অবরোধের নামে আগুন-সন্ত্রাস ও লুটপাট করছে। শুধু তাই নয়, পরিকল্পিতভাবে পোশাক খাতকে অস্থিতিশীল করে তোলা হচ্ছে।’
প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ হত্যা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, হাসপাতালে হামলা এসব যারা করে তাদেরকে আটক করা হবে না তো কী করা হবে?’
দেশব্যাপী নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এসব সন্ত্রাস করবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোটের মাধ্যমেই বার বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছে। পঁচাত্তরের পর অস্ত্রের জোরে যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে, তারা সন্ত্রাস ও লুটপাট ছাড়া জনগণকে কিছুই দিতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের নামে আবার আগুনে মানুষ পোড়ানো শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত। এদের প্রতি শুধুই ঘৃণা। দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন, আওয়ামী লীগের অপরাধ কী? সরকারকে কী কারণে পদত্যাগ করতে হবে? আমরা তো ওদের মতো আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারি না।’
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের এই অধিকারকে সুরক্ষা দেয়া এবং সুষ্ঠুভাবে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করা- এটাই আমাদের লক্ষ্য।
‘আমরা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারে বিশ্বাস করি, সাংবিধানিক অধিকারে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোটের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ বার বার ক্ষমতায় এসেছে।’
নানা দিক থেকে চক্রান্ত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে চক্রান্ত আছে। চক্রান্ত করেই চেষ্টা হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে পঙ্গু করা, অগ্নি-সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা করে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। সব দিক থেকে চেষ্টা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমাদের সবাইকে এক হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের শক্তি দেশবাসী। ‘
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষ যখন শান্তিতে আছে তখন এই দলটি আবার রাস্তায় নেমেছে অগ্নি-সন্ত্রাস নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে। এই অশান্তির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে।’
পোশাক শ্রমিকদের জন্য যে মজুরি বাড়ানো হয়েছে তা মেনে নিয়ে তাদেরকে কাজে যোগদানের আহ্বান জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমি গার্মেন্টস শ্রমিকদের বলব, যেটা (মজুরি) বাড়ানো হয়েছে সেটা নিয়েই তাদের কাজ করতে হবে। তারা কাজ করুক। পোশাক শ্রমিকদের মজুরি দফায় দফায় বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এবার ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। সে হিসাবে ৫৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বেতন বাড়ানোর আন্দোলনের নামে ১৯টি কারখানা ধ্বংস করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই সময় আসে তাদের সবরকম সুবিধা আমরা করে দেই। কিন্তু তারা যদি সেটা না বুঝে কারও প্ররোচনায় রাস্তায় নামে, তখন যারা তাদের উস্কানি দিচ্ছে তারাই তাদের ধ্বংস করবে, (শ্রমিকদের) লাশ ফেলবে। এরাই এমন অবস্থা সৃষ্টি করবে যে তারা (শ্রমিকরা) চাকরি হারাবে, কাজ হারাবে। গ্রামে গিয়ে পড়ে থাকতে হবে। এটা শ্রমিকদের বুঝতে হবে।’
সরকারে থেকে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেনি উল্লেখ করে দলটির সভাপতি বলেন, ‘এখনও ৭০ ভাগ মানুষ এই দলের ওপর আস্থা রাখে। একমাত্র আওয়ামী লীগই প্রকৃত রাজনৈতিক সংগঠন, বাকিরা হত্যা ও ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু বোঝে না।
‘সার, বিদ্যুৎসহ অনেক খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। বিনামূল্যে করোনার টিকা দেয়া হয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশ এ সুবিধা দিয়েছে?’
আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের পর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। রাত ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও বৈঠক চলছিলো। প্রায় তিন মাস পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হচ্ছে। এর আগে চলতি বছরের ১২ আগস্ট সবশেষ বৈঠক হয়।
এবারের বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য নানা উপ-কমিটি গঠন, বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোকাবিলায় কৌশল নির্ধারণ এবং সমসাময়িক বিষয়ে আলোচনা হয়।