রাজশাহীর তানোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে দুইজনকে হত্যা করার পর দিগ্বিদিক ছুটে বেড়ানো হাতিটি অবশেষে ধরা পড়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এটি আটক হয়।
ঢাকা থেকে আসা উদ্ধারকারী দল চেতনানাশক ট্রাংকুলাইজার ব্যবহার করে হাতিটিকে অচেতন করে আটক করে।
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হাতিটির মালিকের বাড়ি বগুড়ার মহাস্থানগড় এলাকায়। বিকেল চারটার দিকে হাতিটি ধরার পর মালিকের পক্ষে সাকিল হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে হাতিটি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এলাকায় এই হাতি নিয়ে যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, তা এখন আর নেই। এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার মানিকড়া গ্রামের আম বাগানে দুটি হাতি বেঁধে রেখে মালিক খাবার খেতে যান। এক পর্যায়ে হাতি দুটি গাছের ডাল ভেঙে ছুটে যায়। বুধবার সকালে থেকে মানিকড়া গ্রামে হাতি দুটিকে দেখতে ভিড় করে উৎসুক জনতা। এ সময় তারা হাতি দুটিকে আটকের চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে হাতি দুটি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সেখানে থাকা কিশোর মুফাসসিরকে একটি হাতি শুঁড় দিয়ে ধরে আছাড় মারে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মুফাসসির নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বুলবুল হোসেনের ছেলে।
দুটি হাতির মধ্যে পরে একটি হাতিকে আমনুরা শিমুলতলা মোড়ে আটক করা সম্ভব হয়। আরেকটি হাতি চলে যায় পাশ্ববর্তী তানোর এলাকায়।
তানোর উপজেলার ধামধুম এলাকায় বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হাতিটি তাণ্ডব চালায়। একপর্যায়ে রামপদ মুণ্ডা নামে এক যুবককে পদপিষ্ট করে চলে যায় সেটি। এতে ঘটনাস্থলেই রামপদ নিহত যান।
রামপদ উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের জুমার পাড়া গ্রামের মৃত ললিত মুণ্ডার ছেলে।
হাতি ছুটে যাওয়ার খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা সেটি ধরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বুধবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে সেদিনের মতো কাজ স্থগিত করেন তারা।
এদিন হাতি ধরতে পুরো উপজেলা প্রশাসন তানোরের ধামধুম গ্রামে অবস্থান নিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠে ছিল পুলিশ। ফায়ার সার্ভিস থেকে পানি দিয়েও হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। চেতনানাশক ট্রাংকুলাইজার দেয়ার চেষ্টা করলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। শেষ পর্যন্ত খবর দেয়া হয় ঢাকায়।
ঢাকা থেকে আসা বন বিভাগের উদ্ধারকারী দল বৃহস্পতিবার সকালে তানোরে গিয়ে দেখতে পায়, ধামধুম গ্রাম থেকে হাতিটি সরে গিয়ে বৈধ্যপুর কবরস্থানে অবস্থান নিয়েছে। হাতি আতঙ্কে আশপাশের গ্রামের মানুষ এদিন ঘর থেকে বাইরে বের হয়নি।
দুপুরে বন বিভাগের উদ্ধারকারী দল হাতিটিকে ধরে ফেললেও শিকল ভেঙ্গে পালিয়ে যায়।
রাজশাহী বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে চেতনানাশক দিয়ে এটিকে ধরে ফেলা হলেও কিছুক্ষণ পর এটি আবার পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।’
পরে বিকেল চারটার দিকে চেতনানাশক ট্রাংকুলাইজার ব্যবহার করে হাতিটিকে অচেতন করা হয়। এ সময় হাতিটিকে ঘিরে ধরে ঢিল মারতে থাকে স্থানীয় ক্ষুব্ধ জনতা। এ অবস্থায় হাতিটি আবারও ছুটে যেতে পারে- আশঙ্কায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয়দের ওপর চড়াও হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর উপজেলা প্রশসান হাতির মালিকপক্ষকে এটি বুঝিয়ে দেন।