বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে রেকর্ড সংখ্যক প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের সকাল দশটায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রেকর্ড ৪৪টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। সময়ের বিবেচনায়ও রেকর্ড ছিলো এ বৈঠকে। সকাল দশটায় শুরু হয়ে বৈঠক চলে প্রায় সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। পরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সহ পরিকল্পনা কমিশনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা সংবাদিকদের কাছে সভার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী ওই সময় জানান, ভর্তুকি থেকে পুরোপুরি বের হয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য বিদ্যুৎ ও পানির দাম নির্ধারণে নতুন কৌশলে হাটার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘এলাকা ও আয় অনুপাতে বিদ্যুৎ ও পানির দাম নির্ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। যার আয় বেশি তার জন্য এসব ক্ষেত্রে ভর্তুকী কমিয়ে দিতে হবে, আবার যার আয় কম তার জন্য কিছুটা ভর্তুকী রাখা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সরকার প্রধান।’
সেটা নির্ধারণ কীভাবে হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। যার আয় বেশি তার জন্য বিলও বেশি হবে। মনে করেন আমি মান্নান একজন মন্ত্রী, আমার জন্য আর কম বেতনের একজনের জন্য সমান বিল হবেনা, হওয়া উচিতও নয়।’
এক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের এমন চর্চা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে মন্ত্রী জানান, সহসাই এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। নানাভাবে বিচার বিশ্লেষণ করেই এই হার নির্ধারণ করা যেতে পারে।
তিনি আরোও বলেন, ‘একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গাজায় নারী ও শিশু হত্যায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। দ্রুত এই সহিংসতা বন্ধ হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।’
অনুষ্ঠানে নির্বাচন সামনে রেখে বেশি প্রকল্প নেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে প্রতিমন্তী ড. শামসুল আলম অনুষ্ঠানের আলোচনার ব্যাখা তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, বেশি প্রকল্প নেয়া কোনোভাবেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। তবে তিনি বলেন শেষ সময়ে জমে থাকা বহু প্রকল্প অনুমোদন দিতে হয়েছে এ বৈঠকে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই মেয়াদের যেহেতু সময় শেষ তাই টেবিল পরিস্কার বলে একটা বিষয় আছে, এখানে জবাবদিহিতা হচ্ছেনা একথা মোটেও ঠিক নয়। প্রতিটি প্রকল্প যাচাই-বাছাই করে নেয়া হচ্ছে এটাই জবাবদিহিতা।’
তিনি আরোও জানান, আগামী দুই মাস কোনো একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে না। এ সরকারের মেয়াদে এটাই শেষ বৈঠক।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, ‘আজকের প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২২টির সঙ্গে বিদেশি ঋণ চুক্তি হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদন না পেলে ঋণ ছাড়ও হচ্ছেনা। তাই এগুলো অবশ্যই চলমান প্রক্রিয়া, এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’
একনেক বৈঠকে এদিন চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৪৪টি প্রকল্পের। যেখানে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি ব্যয় হবে ৩০ হাজার ১২৩ কোটি টাকা, বৈদিশিক ঋণ ৭ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা বাকি টাকা আসবে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে। এদিন টেবিলে উত্থাপিত মোট ৯টি প্রকল্পের মধ্যে সবকটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।
একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঢাকাস্থ শেরেবাংলা নগর এলাকায় পার্ক নির্মাণ, শেরেবাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকায় বহুতল সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ১২৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনরুদ্ধার সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প।