প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে সহিংসতা ও ভুল তথ্য বা গুজব প্রধান দুটি বাধা। এ সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মিত্রদেরকে বাংলাদেশের পাশে থাকা উচিত।
‘সহিংসতা ও ভুল তথ্য: বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে রাজধানীতে মঙ্গলবার এ কথা বলেছেন বক্তারা।
বক্তারা বাংলাদেশের অগ্রগতি, বিশেষ করে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল এবং মেট্রোরেলের মতো বৃহৎ অবকাঠামোগত উন্নয়নের (মেগা প্রকল্প) কথা উল্লেখ করে টানা ১৫ বছর সরকারের ধারাবাহিকতাকে কৃতিত্ব দেন।
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলম্যান, মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট লেখক ড. নুরুন নবী। এতে আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক আবদুর চৌধুরী, অধ্যাপক এবিএম নাসির, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেথ ওল্ডমিক্সন এবং জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. মাজহারুল ইসলাম রানা।
বক্তারা লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্রতা থেকে বের করে আনতে মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের উপবৃত্তিসহ সামাজিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন। এ ছাড়া জামায়াত-বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধীদল নৈরাজ্য ও সহিংসতা সৃষ্টি না করলে বাংলাদেশ আরও অগ্রগতি অর্জন করতে পারে বলেও দাবি করেন তারা।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বিরোধী দলগুলোর দাবির কথা উল্লেখ করে বক্তারা প্রশ্ন রাখেন- কেন তারা অসাংবিধানিক কিছু দাবি করেছে? তারা সংবিধানের কথা উল্লেখ করে জানান, নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানেই নির্বাচন হওয়া উচিত।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক আবদুর চৌধুরী বলেন, ‘গোল্ডম্যান স্যাকস অ্যান্ড চেজ’ বাংলাদেশকে বিশ্বের পাঁচটি উদীয়মান অর্থনীতির একটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে এ পর্যায়ে উঠে আসা এক আশ্চর্যজনক অগ্রগতি। বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে রয়েছে। বাংলাদেশ কাজ করছে এর বিশাল মানব সম্পদ থেকে দক্ষ শ্রমশক্তি নিয়ে। তিনি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিশেষ করে ধারাবাহিক ও বৈচিত্র্যময় খাতে বিদেশি বিনিয়োগের পক্ষে মত দেন।
ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের (আইআরআই) সাম্প্রতিক এক জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বর্তমান সব অর্থনৈতিক ইস্যু সত্ত্বেও শেখ হাসিনার ৭০ শতাংশ অনুমোদন রেটিং রয়েছে। সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেছেন ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে লড়াইয়ে বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের কারণে ফ্রান্স বাংলাদেশে তৃতীয় ধারাবাহিকতাকে সমর্থন করবে।
ব্ল্যাকবার্ন আরও উল্লেখ করেন, জামায়াত-বিএনপি নেতৃত্বাধীন একচেটিয়া ভুল তথ্য বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে, তাই ইউরোপীয় ও আমেরিকান উভয় অংশীদারদেরই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এগিয়ে আসা উচিত। তিনি আরও উল্লেখ করেন, তারেক জিয়া সহিংসতার প্রতীক! যুক্তরাজ্য সরকার তারেক জিয়ার ও বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের একই চোখে দেখে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষতি করছে এবং বিএনপি এটা খুব ভালো করেই জানে। কিন্তু বিএনপি অগ্নিসংযোগ ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
ড. মাজহারুল ইসলাম বাংলাদেশে ভুল তথ্য ও ভুল তথ্যের প্রভাব এবং এটি কীভাবে সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে সে সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্রমাগত ভুল তথ্য, ভুল তথ্য ছড়িয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার চক্রান্ত তৈরি করেছে এবং একই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি পলাতক বিএনপি নেতা তারেক জিয়া, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পলাতক আসামি ও জামায়াতে ইসলামীর নির্দেশনায় আজও সক্রিয় রয়েছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা, আসন্ন নির্বাচন এবং সংখ্যালঘু নিপীড়ন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সাম্প্রতিক হুমকি সম্পর্কে তারা ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বাজে উদাহরণগুলো হল, সাংবাদিক চন্দন নন্দীর ‘রান্না করা গল্প’। ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ইইউ পার্লামেন্টে অধিকারের মামলা নিয়ে রেজুলেশন পাস এবং ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশে বিএনপির সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে ৩১ অক্টোবরের প্রেস ব্রিফিং নোটগুলো ভুল তথ্যের ফসল।
সেথ ওল্ডমিক্সন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সহিংস চরমপন্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জনবল নিয়োগ এবং বাংলাদেশে সহিংসতা উস্কে দিতে বেশ সক্রিয়।
যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, দূতাবাসকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। জামায়াত একটি জটিল এবং কঠিন সমস্যা, তারা রাজনৈতিক দল হিসাবে বিবেচিত না। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রকে কঠিন অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত যদি বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসে, ওই সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পর্ক রাখতে হবে। রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখা খুব জটিল কাজ।