বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রেস্তোরাঁয় কিশোর-কিশোরীদের জরিমানার পর ভিডিও ফেসবুকে

  • প্রতিবেদক, সিলেট   
  • ৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০৯:৫৮

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘আমাদের আদালতের কার্যক্রমের ভিডিও কখনো প্রকাশ করা হয় না। যাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে তিনি আপিল করলে তো নির্দোষও প্রমাণিত হতে পারেন। তাই আদালতের কার্যক্রমের ভিডিওচিত্র ধারণ ও প্রকাশ অনুচিত।’

সিলেটের গোলাপগঞ্জে একটি রেস্তোরাঁয় অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে মোবাইল কোর্ট চালিয়ে সাত কিশোরকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এ ঘটনার পুরো ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

গোলাপগঞ্জের চৌমুহনী এলাকার কাজি ফার্মস নামক রেস্তোরাঁয় গত ৩০ অক্টোবর সকালে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে সাত কিশোরীকে তাদের জিম্মায় তুলে দেয়া হয়।

ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ওই কিশোর-কিশোরী ও তাদের পরিবার।

অভিযানে অংশ নেয়া পুলিশ সদস্যরাই মোবাইল ফোনে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন এবং কিশোরীদের নেকাব খুলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, যদিও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।

ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি থেকে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়, তবে কারা ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায় হয়নি।

রেস্তোরাঁের ওই ভিডিওচিত্রটি নিউজবাংলার এসেছে।

সেখানে দেখা যায়, রেস্তোরাঁঁয় আলাদা কেবিনে বসে আড্ডা দিচ্ছেন সাত জোড়া কিশোর-কিশোরী। এরপর কিছু সংখ্যক লোক ওই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম এবং পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন।

এরপর দেখা যায়, একাধিক ব্যক্তি ওই কিশোর-কিশোরীকে নানা প্রশ্ন করছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় এবং একজন প্রমিত বাংলায় প্রশ্ন করছেন, তবে ভিডিওতে প্রশ্নকর্তাদের চেহারা দেখা যায়নি, কেবল কিশোর-কিশোরীদের দেখা গেছে।

ওই সময় একজন এক এক করে সব কিশোর-কিশোরীদের প্রশ্ন করছেন, ‘তোমার বাড়ি কই? বাবার নাম কী? কোন স্কুলে পড়ো?’

ওই সাত কিশোরীর মুখেই নেকাব ছিল। এ অবস্থায় একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘মুখ খোলো, পর্দা খোলো।’

কিশোরীরা পর্দা খুলতে প্রথমে অনীহা জানালে ওই ব্যক্তিকে আবার বলতে শোনা যায়, ‘এই খুলতে বলছি না? মুখ খোলো।’

নেকাব খোলার পর আরেকজন প্রশ্ন করেন, ‘এইখানে কেন আসছো? এইখানে আসছো কেন? এইটা কি স্কুল?’

কিশোর-কিশোরীদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ঘটনার দিন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ চৌধুরী ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে রেস্তোরাঁে থাকা সাত কিশোরের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে এক সপ্তাহের কারাদণ্ড প্রদান করেন।

অভিযানে অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের দায়ে কাজি ফার্মসকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ওই রেস্তোরাঁয় থাকা এক কিশোরীর অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে কোনো অপরাধ করে থাকলে তার শাস্তি হতে পারে। কিন্তু তার ভিডিও কেন ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হলো।

স্থানীয়রা জানান, এই কাজি ফার্মস রেস্তোরাঁর একটি তলায় কেবিনের মতো করে তৈরি করা হয়েছে। সেখানে প্রতিদিনই স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা আড্ডা দেয়। তাদের কারো কারো আচরণে রেস্তোরাঁয় যাওয়া অন্য গ্রাহকদের বিব্রত হতে হয় এমন অভিযোগ এনে স্থানীয় কয়েজন মেয়র, পুলিশ ও প্রশাসনকে জানান। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতেই মোবাইল কোর্ট অভিযান চালায়।

তবে অভিযানের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া অনুচিত হয়েছে বলে জানান তারা।

অভিযানের সময় উপস্থিত থাকা দুজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রেস্তোরাঁয় অভিযানে গিয়ে গোলাপাগঞ্জ থানার এসআই নুর মিয়া এবং ফেসবুক পেজ পরিচালনাকারী কয়েকজন ভিডিও ধারণ করেন। এ ছাড়া কিশোরীরে নেকাব খুলতেও বাধ্য করেন এসআই নুর মিয়া।

তবে এসআই নুর মিয়া এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার খবর পেয়ে আদালতকে সহায়তা করতেই ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলাম। আমি কোনো ভিডিও করিনি। এ ছাড়া ভিডিওতে যে কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে সেটাও আমার কণ্ঠ না।’

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পুলিশ কেন ভিডিও করবে? পুলিশ এতো বোকা না কি? সবারই তো মা-বোন আছে।’

অভিযানের সময় উপস্থিত সাংবাদিকরাই এই ভিডিও করেছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘পৌরসভার মেয়র ও পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। আমার উপস্থিতিতে কোনো ভিডিও হয়নি। ভিডিওর বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ওসিকে বলেছি এই ভিডিও কারা ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।’

ছেলেদের কেন জরিমানা করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা আপত্তিকর অবস্থায় ছিল। যদিও আমি তেমন কিছু দেখিনি, তবে পুলিশ, মেয়র ও স্থানীয়রা এমন অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্তরাও এটা স্বীকার করেছে। তাই তাদের জরিমানা করা হয়েছে।’

‘আপত্তিকর অবস্থা’ মানে কী, এমন প্রশ্নে অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘আপত্তির মানে অসামাজিক। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে অফিসে আসেন।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়রা আড্ডা দেবে, রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করবে এতে আমাদের আপত্তি নেই। অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ আসায়ই অভিযান চালিয়েছি।’

তবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ চৌধুরীর কাছে অভিযোগ দেয়ার কথা অস্বীকার করে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল বলেন, ‘আমি তাকে অভিযোগ করব কেন, তিনি আমার চাকরি করেন না কি?

রাবেল বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের কাছ থেকে শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। জরিমানা করা ও ভিডিও ধারণের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। কে ভিডিও করছে তাও দেখিনি।’

এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘ভ্রাম্যমান আদালতকে সহযোগিতা করতে সেদিন ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল, কিন্তু ভিডিও কারা করেছে তা জানি না। তাদের আমরা খুঁজছি, তবে কোনো পুলিশ সদস্যের আইডি থেকে এই ভিডিও ফেসবুকে দেয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নানের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

ভ্রাম্যমান আদালতের ভিডিও এভাবে ছড়ানো অনুচিত হয়েছে জানিয়ে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘আমাদের আদালতের কার্যক্রমের ভিডিও কখনো প্রকাশ করা হয় না। যাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে তিনি আপিল করলে তো নির্দোষও প্রমাণিত হতে পারেন। তাই আদালতের কার্যক্রমের ভিডিওচিত্র ধারণ ও প্রকাশ অনুচিত।’

তিনি বলেন, ‘অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে সাজা দেয়ার বিধান আমাদের আইনে রয়েছে। একইসঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং নারীর পরিচয় গোপন রাখার কথাও বলা হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর