বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বড় আওয়াজের পর দেখি বডিগুলো রাস্তায়’

  •    
  • ৭ নভেম্বর, ২০২৩ ২৩:৪০

পরিবারের সবাইকে হারানোর খবর এখনও জানেন না ওমান প্রবাসী নারায়ণ দাশ। দুর্ঘটনার খবর শুনেই বাড়ি ফেরার বিমান ধরেছেন তিনি।

‘আমি যখন দেখছি, পুরো রাস্তায় বডি (মরদেহ), আমি ভয় পেয়ে আবার ভেতরে চলে গেছি। পরে আবার সাহস করে আসছি, দেখতেছি এক এক করে সবাই মারা যাচ্ছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯ নম্বরে কল দিই। ওখানে যোগাযোগ করে বলি, এখানে অ্যাম্বুলেন্স লাগবে, পুলিশ লাগবে।’

ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে এভাবেই দুর্ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্বনাথ শীল। তিনিসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনার সময়কার চিত্র।

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এ দুর্ঘটনাতে প্রাণ হারান তিন শিশুসহ একই পরিবারের ৭ জন।

বিশ্বনাথ বলেন, ‘সিএনজি দক্ষিণ দিক থেকে আসতেছিল, ফটিকছড়ির দিকে যাচ্ছিল। বাসটা নাজিরহাটের দিক থেকে হাটহাজারীর দিকে যাচ্ছিল। মুখোমুখি সংঘর্ষ হইছে। বাসটা রং সাইডে আসছে।’

ঘটনার সময় বেপরোয়া ছিল বাসটি। চেষ্টা করছিল ওভারটেকিংয়ের। বিশ্বনাথের বর্ণনায় উঠে আসে সেই তথ্যও৷ বলেন, ‘ওভারটেক করার সময় একটা সিএনজিকে আরেকটু হলেই মেরে দিচ্ছল, কিন্তু ওটাকে মারে নাই, পেছনেরটাকে মেরে দিছে৷ এরপর পেছনে আরেকটা কার ছিল, কারকেও একটু টাচ করছে। সিএনজি থেকে সবাই পড়ে গেছে সঙ্গে সঙ্গে। এক মিনিটও লাগে নাই। একটা বড় আওয়াজ দিছে, আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে সবগুলো বডি রাস্তাতে।’

‘কারটা একটু ক্ষতিগ্রস্ত হইছে। কারে একটা শিশু ব্যথা পেয়েছে। কারটা বাচ্চাটাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেছে সম্ভবত।’

দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে বিশ্বনাথের আগেই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে সাহায্যের জন্য বলেছিলেন হাটহাজারীর চারিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. শাহাজান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি পাশে থাকা একটি নার্সারিতে ছিলাম। বিকট শব্দ শুনে দেয়ালের ওপর দিয়ে দেখি দুর্ঘটনা। সেসময় শহরের দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেট কার দ্রুত চলে যাচ্ছিল; কারটির সামনে একটু ভাঙ্গা ছিল। তখন আমার মাথা কাজ করে নাই; দ্রুত ৯৯৯ নম্বরে কল দিই।

‘আমি দেয়ালের ওপর লাফ দিয়ে গিয়ে দেখি সবগুলো মানুষ জড়বস্তুর মত রাস্তায় পড়ে আছে৷ কেউ একটা শব্দও করে নাই। একটা লোক দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সিএনজির সামনের অংশে শুধু মাথাটা বের করা ছিল, আর শরীরের বাকি অংশ ভেতরে। তখন তাকে বের করেছি সেখান থেকে।

‘ছোট ছোট দুটো বাচ্চা ছিল; তাদের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে৷ কারণ আমরাও ছোট ছোট তিনটা বাচ্চা আছে। এটা দেখে আমি রীতিমতো অসুস্থ হয়ে গেছি; দুপুরে কিছু খেতে পারিনি।’

নারায়ণ এখনও জানেন না, তার সব শেষ

এক বছর আগে পরিবারে সুদিন ফেরাতেই ওমান পাড়ি দিয়েছিলেন চন্দনাইশের জোয়ারা এলাকার নারায়ণ দাশ। মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও চার সন্তানকে হারান তিনি। একই দুর্ঘটনায় মারা যান তার ভাতিজা ও বড় বোন; আহত হন ভাগিনা।

মর্মান্তিক এই ঘটনার পর নারায়ণকে স্বজনরা দুর্ঘটনায় স্ত্রী-সন্তান গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। খবর পেয়েই দেশে ফেরার টিকেট কাটেন নারায়ণ। বুধবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা তার। স্ত্রী ও চার সন্তান আর নেই- এই তথ্য এখনো জানেন না নারায়ণ।

নারায়ণের কাকা শ্বশুর রিমন দাশ বলেন, ‘সে দেশে আসতেছে। রাত দুটায় তার ফ্লাইট, সকালে চট্টগ্রামে পৌঁছানোর কথা। তাকে জানানো হয়েছে সবার অবস্থা গুরুতর, মারা গেছে এটা জানায়নি কেউ।’

এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে হাটহাজারীর চারিয়া এলাকায় বাসচাপায় সিএনজি অটোরিকশার ৭ যাত্রী নিহত হন। অটোরিকশার চালকসহ আহত হন আরও দুজন।

নিহতরা হলেন- চন্দনাইশের জোয়ারা ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকার হিন্দুপাড়ার নারায়ণ দাশের স্ত্রী রিতা রানী দাশ, বড় মেয়ে ১৭ বছর বয়সী শ্রাবন্তী দাশ, ছোট মেয়ে ৯ বছর বয়সী বর্ষা দাশ, ৪ বছর বয়সী জমজ ছেলে দ্বীপ দাশ ও দিগন্ত দাশ, ভাসুরের ছেলে বিপ্লব দাশ এবং ননদ চিনু বালা দাশ। তাদের সবার বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশে। আর আহত হন অটোরিকশার চালক বিপ্লব মজুমদার ও চিনু বালা দাশের ছেলে বাপ্পা দাশ।

হতাহত সবাই চন্দনাইশ থেকে ফটিকছড়ির শাহ নগরে রীতা রানী দাশের ঠাকুরমার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর