একাত্তর সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের খান আকরামসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় আগামী বৃহস্পতিবার ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এমএলবি মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলামসহ তিন বিচারপতির ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন বলে তিনি জানান।
এ মামলায় ৯ আসামির মধ্যে ৬০ বছর বয়সী খান আকরাম হোসেন, ৬২ বছর বয়সী শেখ মোহম্মদ উকিল উদ্দিন, ৭৯ বছর বয়সী মো. মকবুল মোল্লা কারাবন্দি।
আর পলাতক আসামিরা হলেন- ৬৫ বছর বয়সী খান আশরাফ আলী, ৬৮ বছর বয়সী সুলতান আলী খান, ৭০ বছর বয়সী রুস্তম আলী মোল্লা, ৬১ বছর বয়সী শেখ ইদ্রিস আলী, ৬৪ বছর বয়সী শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল ও ৬৯ বছর বয়সী মো. মনিরুজ্জামান হাওলাদার।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত, তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন।
আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ২০১৭ সালের ৩১ মে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেয়া হয়। পরে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
রায়ের আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে এমনটি প্রত্যাশা করে প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি, আশা করি তাদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।’
আসামিদের বিরুদ্ধে যে সাত অভিযোগ
অভিযোগ-১: ১৯৭১ সালের ২৬ মে ১৫-২০ জন রাজাকার ও ২৫-৩০ জন পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানাধীন চাপড়ী ও তেলিগাতীতে নিরীহ নিরস্ত্র মুক্তিকামী মানুষের ওপর অবৈধভাবে হামলা চালিয়ে ৪০-৫০টি বাড়ির সব মালামাল লুণ্ঠন করে, বাড়িঘর অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, দুজন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করে এবং ১০ জন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে গুলি করে হত্যা করে।
অভিযোগ-২: ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই আসামিরা বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন হাজরাখালী ও বৈখালী রামনগরে হামলা চালিয়ে অবৈধভাবে নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের চারজন লোককে আটক ও অপহরণ করে আবাদের খালের ব্রিজে হত্যা করে লাশ খালে ফেলে দেয়।
অভিযোগ-৩: ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানাধীন ঢুলিগাতী গ্রামে হামলা চালিয়ে দুজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করে।
অভিযোগ-৪: ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল ও বিছট গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের লোককে আটক ও অপহরণ করে কাঁঠালতলা ব্রিজে এনে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
অভিযোগ-৫: ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল গ্রাম হতে নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী নকীবকে অন্যায় আটক ও অপহরণ করে মোরেলগঞ্জ থানার দৈবজ্ঞহাটির গরুর হাটির ব্রিজের ওপরে নিয়ে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে।
অভিযোগ-৬: ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন উদানখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র উকিল উদ্দিন মাঝিকে অবৈধভাবে আটক করে হত্যা করে এবং তার মেয়ে তাসলিমাকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসে। কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশপাশের রাজাকার ক্যাম্পে দীর্ঘদিন অবৈধভাবে তাসলিমাসহ চারজনকে আটকিয়ে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ দখলদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প তল্লাশি করে ভিকটিম তাসলিমাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেন।
অভিযোগ-৭: বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন গজালিয়া বাজারে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ নিরস্ত্র শ্রীধাম কর্মকার ও তার স্ত্রী কমলা রানী কর্মকারকে অবৈধভাবে আটক করে নির্যাতন করে। আসামিরা শ্রীধাম কর্মকারকে হত্যা করে কমলা রানী কর্মকারকে জোর করে অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে এনে আটকে রাখে। উল্লিখিত আসামিসহ কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশপাশের রাজাকার ক্যাম্পে কমলা রানী কর্মকারসহ অন্য চারজনকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। প্রায় এক মাস শারীরিক নির্যাতনের পর কমলা রানী কর্মকার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।