আদেশ না মেনে শিশুকে নিয়ে দেশত্যাগ করায় আদালত অবমাননার মামলায় ৬ মাসের দণ্ডিত বাবা সানিউর টিআইএম নবীকে জামিন দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। বাবাকে জামিন দিলেও শিশুকে আপাতত মায়ের কাছে থাকবে বলেও আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আদেশে আদালত বলেছে, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিশুটি তার মা সাদিকা শেখের কাছে থাকবে। আর বাবা সপ্তাহে দুইদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পযর্ন্ত শিশুটির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া শিশুকে দেশের বাইরে নেয়া যাবে না।
সোমবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে শিশুটির বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান। মায়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, তার সঙ্গে ছিলেন কাজী মারুফুল আলম।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালে হায়দারাবাদের সাদিকা সাঈদ শেখ নামে এক নারীকে বিয়ে করেন বারিধারার সানিউর টিআইএম নবী। বিয়ের পর তারা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন। কয়েক মাস পর তারা ঢাকায় ফিরে আসেন।
এরইমধ্যে ওই দম্পতির এক ছেলে সন্তান হয়। কিন্তু করোনাকালে তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেয়। এমনকি ভারতের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাদিকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। বিষয়টি ভারতে মেয়েটির আত্মীয়-স্বজনরা জানতে পারেন। এরপর ওই দেশ থেকে তাদের পরিবারের পক্ষে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। তারপরও বিষয়টি সমাধান হয়নি। বরং সাদিকাকে ডিভোর্স দেন নবী।
পরে বিষয়টি নিয়ে সাদিকার বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান। পরে সেই সংগঠন থেকে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৬ আগস্ট মা-সহ শিশুটিকে হাজির করতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে শিশু সন্তান নিয়ে হাজির হলে শিশুটিকে মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে বাংলাদেশি বাবা সপ্তাহে তিনদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন বলে নির্দেশ দেয়া হয়। এ দুই মাস সাদিকা সাঈদের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা রাখতে বলা হয়।
এরপর এ মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় শিশুটিকে নিয়ে বাবা সানিউর টিআইএম নবী দেশ ত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়া চলে যান।
আদালতের আদেশ থাকা সত্ত্বেও শিশুকে হাজির না করে বিদেশ চলে যাওয়ায় বাবা সানিউর টিআইএম নবীকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। অনাদায়ে আরও এক মাস কারাদণ্ড দেয় উচ্চ আদালত।
এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল আদালত সোমবার নবীকে জামিন দিয়ে শিশুটিকে মায়ের জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দেয়।