রাজধানীতে বিএনপির ডাকা অবরোধে যাত্রীবেশে বাসে উঠে আগুন দেয়ার নির্দেশদাতা অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। সিটিটিসি বলছে, এই নেতার নেতৃতে একটি বাসে আগুন দিলে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হতো ৩ হাজার টাকা।
রোববার রাতে বাবুবাজার ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন অভিযুক্ত ওই ছাত্রদল নেতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলে যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকি। এ ছাড়া তার সহযোগী সাকিব ওরফে আরোহানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বোতল ভর্তি পেট্রোল উদ্ধার করা হয়।
সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘গত ১ নভেম্বর রাজধানীর মুগদাপাড়া আইডয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন বাসে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে আগুন দিয়ে পালানোর সময় আল আমিন নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। আল আমিন পুলিশকে জানায়, কার নেতৃত্বে কীভাবে বাসে আগুন দিয়েছে সে। এই ঘটনায় সিটিটিসির গোয়েন্দা দল আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে সে বেশকিছু তথ্য দেয়।’
সিটিটিসির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আল আমিন জানান, তার নেতা বিএনপিকর্মী মিজানুর রহমান। এই মিজানের নেতৃত্বে আরও দুজন কমলাপুর টিটিপাড়া থেকে বাসে উঠে পেছনের সিটে গিয়ে বসেন। এরপর সঙ্গে থাকা পেট্রোল ঢেলে বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মিজাসহ তিনজন পালিয়ে যেতে পারলেও স্থানীয়রা আল আমিনকে ধরে ফেলেন। পরে মিজানকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিটিটিসি বলছে, আমির হোসেন রকি নামের মহানগর ছাত্রদলের একজন নেতার নেতৃত্বে মিজান রাজনীতি করেন। এই রকির নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে প্রথম দফায় মিডলাইন বাসসহ বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেয়া হয়। এই নেতার কাছ থেকে সব রশদ পেয়ে চারজন বাসে আগুন দেয়া শুরু করেন। এর বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: নিউজবাংলা
সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রথম দিনের অবরোধে মিজান এসে আল আমিনের কাছে বোতলে পেট্রোল ও টাকা দেন। এ সময় মিজান তাদের আশ্বস্ত করেন, তাদের দল ক্ষমতায় আসছে, কোনো সমস্যা হবে না। কমলাপুরের টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও সড়কে চলাচল করা বাসে আগুন দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় আল আমিনকে। প্রতিটি বাসে আগুন দেয়ার জন্য ৩ হাজার টাকা বোনাস বিকাশ করেন রকি। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফা অবরোধে বাসে আগুন দেয়ার জন্য রকি ডাবল বোনাস ঘোষণা করেন।’
দ্বিতীয় দফা অবরোধে রোববার রাজধানীতে ১০টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে জানিয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘রোববার রকির নির্দেশনায় দুটি বাসে আগুন দেয়া হয়। পাশাপাশি রকির নির্দেশে যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে আগুন দেয়ার সময়ে হাতেনাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমাদের গোয়েন্দাদের তৎপরতায় আগুন ঠেকিয়ে দেয়া হয়। এটাতে ব্যর্থ হওয়ায় রকি তার সহযোগী সাকিবকে নিয়ে কেরানীগঞ্জে এলাকায় বাসে আগুন দেয়ার উদ্দেশে বিএনপির এক নেতার কাছে যাচ্ছিলেন। তার পিছু নিয়ে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে পেট্রোলসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলে যুগ্ম আহবায়ক আমির হোসেন রকির কাছ থেকে আমরা বেশকিছু তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি৷ সে কী কী কাজ করেছে এই দুই দফা অবরোধে, কার কার নির্দেশনা ছিল, কারা টাকা দিয়েছে, সব তথ্য আমরা পেয়েছি।’ প্রথম দিনের অবরোধে কী পরিমাণ জ্বালাও-পোড়াও করেছে সেই ফুটেজ রকির মোবাইলে পাওয়া গেছে জানিয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন দিতে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কারা কারা সহযোগিতা করেছে আমরা সবার নাম পেয়েছি। আগুন দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কার পাঠানো হতো বিকাশে। আমরা রকির কাছ থেকে নির্দেশদাতাদের তথ্য পেয়েছি। রকির নেতৃত্বে আরও কয়েকটি দল সক্রিয় রয়েছে।’
পুরস্কারের অর্থদাতা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সবার তথ্য পেয়েছি। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে কারো নাম প্রকাশ করছি না। তবে একে একে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হবে।’