নওগাঁর মান্দা উপজেলায় রবি শস্য উৎপাদনে সরকারি কৃষি প্রণোদনার বরাদ্দকৃত গম বীজ ও সার বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জেলার কিছু অসাধু কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এমন কর্মকান্ড চলছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় চাষীরা।
চাষীদের অভিযোগ, এক আইডি নাম্বার দিয়ে কৃষি কার্ডের মাধ্যমে একাধিক নাম ব্যবহার করে কৃষি প্রণোদনার বীজ ও সার উত্তোলন করে নিচ্ছে একটি চক্র। তারা এসব বীজ-সার উত্তোলনের পর উৎপাদনের পরিবর্তে বাজারে বিক্রি করছেন। যার কারণে প্রকৃত চাষীরা এসব সুবিধা পাচ্ছেন না।
এতে লাভবান হচ্ছে সুবিধাভোগী অসাধু একাধিক কৃষি কার্ডধারী ব্যক্তিরা। অন্যদিকে, সরকারি কৃষি প্রণোদনার মূল উদ্দেশ্য কম খরচে শস্য উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।
তারা দাবি করেন, আগে প্রণোদনার বীজ ও সার দেয়ার ক্ষেত্রে যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ থাকলেও তা না করেই বর্তমান কৃষি কর্মকর্তারা এভাবেই চালিয়ে যাচ্ছেন বিতরণ কার্যক্রম।
স্থানীয় চাষীরা জানান, রবি শস্য উৎপাদনের জন্য এ বছর ৭০০ জন প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে কৃষি প্রণোদনার সার ও গমের বীজ বিতরণ করার কথা। উপজেলার নুরুল্যাবাদ ইউনিয়নের জন্য ৫০টি কার্ড বরাদ্দ হয়েছে যা তালিকা অনুযায়ী ইতোমধ্যে কৃষকদের বিতরণ করা হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী একটি পরিবারের কর্তার নামে একটি কৃষি কার্ড প্রযোজ্য। কিন্তু পরিবারের কর্তার পরিবর্তে একই পরিবারের নারী-পুরুষ সকল সদস্যকে প্রান্তিক কৃষক ও চাষী বানিয়ে এসব প্রণোদনার সার ও বীজ নিয়েছেন। আবার এক আইডি নাম্বারের কৃষি কার্ড ব্যবহার করে একই ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন নামে হয়েছে এসব বরাদ্দ ও উত্তোলন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নুরুল্যাবাদ ইউপির ১ নাম্বার ওয়ার্ডের প্রণোদনার সুবিধাভোগী হয়েছেন একই পরিবারের ৮ ব্যক্তি। গোলাম হোসেন ও গোলাম মোস্তফা- দুজনেরই পিতা একজন, তাদের আইডি নাম্বার ২১৪৭৭। হাসান আলী ও তার পিতা গফুর উভয়ের আইডি নাম্বার ০০১৪২। মজিবর আলীর ও মজিবর রহমান উভয়ের পিতা সাইফুল ও ছাইফুল তাদের আইডি নাম্বার ০০৭৮।
এছাড়া প্রবাসী আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী নওশেরা বেগম নামে কৃষি কার্ড করে নিয়েছেন। আরেকজন নুরজাহান নামে কার্ডধারী যিনি পিতার জায়গাতে ভিন্ন নাম বসিয়েছেন। এভাবেই একই পরিবারের ৮ সদস্যদের নামেও উত্তোলন হয়েছে কৃষি প্রণোদনা। তারা জানান, স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারাই তাদের এ অসাধু কাজের সহযোগী।
রবিবার দুপুরে স্থানীয়রা নুরুল্যাবাদ ইউপির জোতবাজারে প্রণোদনার সার ও গমের বীজ ভর্তি একটি ভ্যান আটকের পর ভিডিও ধারণ করেন। এরপর ইউপি সদস্য পাঠিয়েছে এমন কথা বলে ভ্যানটি ইউনিয়ন পরিষদে চলে যায়।
কৃষি প্রণোদনার বরাদ্দকৃত সার ও গম বীজ কৃষকরা সঠিক ভাবে পায়নি এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে রবিবার সন্ধ্যার দিকে নুরুল্যাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের কৃষি অফিসে যান উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাইমিনুল হক। তবে এ সময় তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
স্থানীয় নুরুল্যাবাদ ইউপির উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘এসব কার্ড কিভাবে হয় আপনারা হয়তো জানেন। নাম মাত্র দায়িত্বে থাকলেও এখানে আমাদের করার কিছুই থাকেনা। আমরা কিছু বললে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (স্যার) ভালো চোখে নেন না।’
এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘কৃষি কার্ড থাকলেই সে কৃষক। নারী বা পুরুষ যেই হোক না কেন তাতে কোন সমস্যা নেই।’
একই ব্যক্তির নামে একাধিক কৃষি কার্ড এবং একই পরিবারে ৮ সদস্যদের নামে কৃষি কার্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলার জেলা প্রতিনিধিকে কোনো উত্তর দিতে পারেননি। অথচ এ বিষয়ে সর্বশেষ পরীক্ষা করার দায়িত্বটি তার।
কথা হলে সোমবার দুপুরে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘একজনকে একাধিক বার কৃষক সাজিয়ে প্রণোদনা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেহেতু আপনি এ বিষয়ে অবগত করলেন আমরা খোঁজ নিবো।’