বলা হয়েছিলো দুই মাসের মধ্যে শেষ হবে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজের সংস্কার কাজ। কিন্তু তিন মাস হতে চললেও কাজ শেষ হবার নেই কোনো লক্ষণ। এই দীর্ঘ সময় ধরে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে যান চলাচল রয়েছে বন্ধ। ফলে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে চলতি মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার আশা করছেন তারা।
কয়েকদফা পেছানোর পর গত ১৬ আগস্ট থেকে কিনব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু হয়। ওইদিন থেকেই সেতু দিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। চলাচল বন্ধ রাখতে সেতুর দুই পাশে টিনের বেড়াও দেয়া হয় তখন। ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাস যানবাহন ও মানুষজন চলাচল বন্ধের ঘোষণাও দেয়া হয়েছিল সেসময়।
তবে, রোববার বিকেলে কিনব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখনো সেতুর দুই পাশে টিনের বেড়া দেয়া রয়েছে। সেতুর ওপর ঢালাই ও ঝালাইয়ের কাজ করছেন শ্রমিকরা।
সেতুটি মেরামতের কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রতিনিধি মো. শিপন জানান, দুই মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সেতুর দুই পাশের পাত অকেজো অবস্থায় পাওয়া গেছে, সেগুলো মেরামত করতে অনেকটা সময় লেগেছে। এখন ঢালাইয়ের কাজ চলছে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘চলতি মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’
কিনব্রিজের সংস্কার কাজ করছে রেলওয়ের সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) জীষাণ দত্ত বলেন, ‘বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায় না। এ ছাড়া যতটা ধারণা করা হয়েছিল তার থেকে বেশি খারাপ অবস্থায় আছে কিনব্রিজ। তাই কাজের মেয়াদ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ে সেতু দিয়ে সব ধরণের চলাচল বন্ধ থাকবে।’
এদিকে, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েই চলছে। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনে যাতায়াতের সহজ পথ কিনব্রিজ সেতু। ব্রিজটি বন্ধ থাকায় পথচারীদের ঘুরে অন্য পথে যেতে হচ্ছে। এতে সময় ও টাকা দুই-ই অপচয় হচ্ছে। সেতু দিয়ে চলাচল করতে না পারায় দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে জরুরি প্রয়োজনে নগরীর দক্ষিণ থেকে উত্তর পারে আসা মানুষজনকে। এছাড়া কিনব্রিজ বন্ধ থাকায় শাহজালাল সেতুতে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। ফলে ওই এলাকায় দিনভর লেগে থাকছে দীর্ঘ যানজট।
নগরের ভার্থখলা এলাকার বাসিন্দা আলতাব হোসেন বলেন, ‘আমাদের অনেকটা পথ ঘুরে কাজে যেতে হয়। এখন বাচ্চাদের পরীক্ষা চলছে। ঘুরপথে ও যানজটের কারণে পরীক্ষা হলে যেতেও দেরি হয়ে যায়।’
ঝালোপাড়া এলাকার আতাউর রহমান বলেন, ‘কাজের প্রয়োজনে দিনে দুই তিনবার সুরমা নদী পাড়ি দিতে হয়। কিনব্রিজ বন্ধ থাকায় নৌকায় খেয়া পারাপারে যাত্রী বেড়েছে। ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়ে খেয়া পার হয়। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে রোজ।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, লোহার তৈরি এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ অধিক পারদর্শী। তাই কিনব্রিজ সংস্কার ও মেরামতের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের সূত্র জানায়, জরাজীর্ণ কিনব্রিজের সংস্কারের বিষয়ে ২০২০ সালে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতু সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ সিলেট অফিস। ওই বছরেরই রেলওয়েকে ওই টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়। তবে নানক জটিলতা শেষে সংস্কার কাজ শুরু হয় গত আগস্টে।