এমআরটি লাইন-৬ (উত্তরা-আগারগাঁও) এর প্রথম অংশ চালু হওয়ার পর থেকেই রাজধানীবাসী মেট্রো ট্রেনকে নিয়েছিলো তাদের বিনোদন ভ্রমণের একটি মাধ্যম হিসেবে। কিন্তু ধীরে ধীরে মেট্রো ট্রেনকে মানুষ তাদের জীবনের প্রয়োজনীয় অংশ করে নিতে চাইলেও মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন না চলায় সেটা পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছিলো না। কিন্তু রোববার মেট্রোরেলের চিত্রটা ছিলো একেবারেই ভিন্ন।
উত্তরা হয়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের তিনটি স্টেশন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার পর মনে হচ্ছে মানুষ মেট্রোরেলকে বিনোদন ভ্রমণের মাধ্যম থেকে দৈনন্দিন জীবণের অংশ করে নিয়েছেন সবাই।
শনিবার মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর রোববার সকালে মেট্রোরেলের বিভিন্ন স্টেশনে গিয়ে অসংখ্য যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে দেখা গেছে। এমনকি এসময় মেট্রোরেলের ভেতরে যাত্রীদের ভীড়ও লক্ষ্য করা যায়। এ সময় বিভিন্ন যাত্রীদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, এখন তারা আর ভ্রমনের জন্য মেট্রোট্রেনে উঠছেন না, অফিস অথবা প্রয়োজনীয় কাজেই যাতায়াত করছে ট্রেনে।
যাত্রীরা কী বলছেন
মেট্রোরেলের নতুন অংশ চালু হওয়ায় যুবক থেকে বয়স্ক, শিক্ষার্থী থেকে চাকুরীজীবি ও ব্যাবসায়ী, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার চোখে-মুখেই ছিলো স্বস্তির ছাপ। ঢাকার যানজটের বিভীষিকা থেকে হাফ ছেড়ে যেন বেচে গেল সবাই। সবারই এক কথা, আগে যেখানে কোথাও যেতে লাগতো কয়েক ঘন্টা, আজ সেখানে লাগছে কয়েক মিনিট।
মিরপুর থেকে সচিবলয় স্টেশনে আসা আসিফ ইকবাল নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আমার অফিস পল্টনে। প্রতিদিন আমাকে মিরপুর থেকে পল্টনে যেতে আসতে হয়। আগে এখানে আসতে যেখানে আমার দেড় থেকে দুই ঘন্টা লাগতো আজ সেখানে বিশ মিনিটের মতো লেগেছে মাত্র। মেট্রোট্রেন আমার যাতায়াতের সময় অনেক কমিয়ে দিয়েছে। আমার আশা দ্রুতই এই অংশে সারাদিন ট্রেন চলাচল শুরু করবে কতৃপক্ষ।’
মোহাম্মাদপুরবাসী, ব্যাংক কর্মকর্তা রাসেল মাহমুদ বলেন, ‘কয়েকমাস আগে আমি পরিবার নিয়ে মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে উত্তরা গিয়েছিলাম ঘুরতে। সেটা ছিলো পরিবার নিয়ে অনেকটা ট্রেনে আনন্দ ভ্রমন। কিন্ত আজ আমি বাসা থেকে আগারগাঁও স্টেশনে আসছি মতিঝিল যাওয়ার জন্য। আজ থেকে আমার শুরু হলো প্রয়োজনে মেট্রোরেল ব্যাবহার করা। এখন থেকে আর দুই-তিন ঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হতে হবে না। ৩০ মিনিট হাতে নিয়ে বের হলেই চলবে। এতে সবার সময় বেঁচে যাবে অনেক।’
উত্তরা থেকে মতিঝিল আসা ওবাইদুল ইসলাম বলেন, ‘এই সার্ভিসটা অত্যন্ত সুন্দর। এসির মধ্যে থেকে মাত্র আধাঘন্টায় আমি এখানে চলে এলাম। কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি চলে এসেছি। আগে যেখানে কমপক্ষে দুই ঘন্টা লাগতো। এটা কল্পনার বাইরে। এখন বিকালেও ট্রেন চালু শুরু হলে আর কিছু চাওয়ার নেই।’
কী জানাচ্ছে কতৃপক্ষ
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তাদের আশা আগারগাঁও থেকে মতিঝিল রুটের সব স্টেশন চালু করে সারাদিন ব্যাপী ট্রেন চলাচল শুরু করলে মেট্রোরেল রাজধানীবাসীর দৈনিন্দন জীবনের প্রয়োজনে অংশ হয়ে উঠবে।
এছাড়াও মেট্রোরেল কর্তপক্ষ জানাচ্ছে, প্রাথমিকভাবে রোববার থেকে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা মেট্রোরেল চলাচল করবে। এই অংশে (আগারগাঁও-মতিঝিল রুট) ৭টি স্টেশনের মধ্যে ৩টি স্টেশন (ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিল) চালু হয়েছে। দ্রুতই বাকি স্টেশনগুলো (বিজয় শরণী, কাওরানবাজার, শাহবাগ, ঢাবি) চালু করা হবে।