বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারে ধারণক্ষমতার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি বন্দি রয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে।
কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এই কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৩৫২ জন, কিন্তু বন্দি রয়েছে এক হাজার ৭৫৬ জন, তবে বন্দিদের কারাগারে থাকতে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, ১৯১৮ সালে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর তীরে উপকারাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৪ সালে সিরাজগঞ্জ জেলা ঘোষণা হওয়ার পর ১৯৯৪ সালে উপকারাগারটি জেলা কারাগারে রূপান্তরিত হয়।
পরে শহরের কান্দাপাড়া এলাকায় ৬ দশমিক ৫০ একর জমির ওপর ১৯৯৪ সালের (১৭ নভেম্বর) এই কারাগারের কার্যক্রম শুরু হয়। ৬ দশমিক ৫০ একর জায়গা নিয়ে কারাগারের অবস্থান, তবে যার মূল কারাগার চার একর।
কর্তৃপক্ষ জানায়, এই জেলা কারাগারে বন্দিদের জন্য মোট সাতটি ভবন রয়েছে। ৩৩২ জন পুরুষ, ২০ জন নারী বন্দি (হাজতি ও কয়েদি) মিলে মোট ৩৫২ জনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন থাকলেও এক হাজার ৭৫৬ জন আসামি বন্দি আছেন।
এর মধ্যে নারী বন্দি আছেন ৬২ এবং এক হাজার ৭৫৬ বন্দির ভেতরে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি আছেন ৩৫৪। নারী কয়েদি আছেন ৯ জন। মোট বন্দির মধ্যে ৫৩ জন নারীসহ হাজতি আছেন মোট এক হাজার ৪০২। এই বন্দিরা বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
বর্তমানে হিসাব করলে দেখা যায়, ধারণ ক্ষমতা ৩৫২ জনের জাগায় বন্দি আছেন এক হাজার ৭৫৬ জন, যা সংখ্যায় প্রায় পাঁচগুণ (৪ দশমিক ৯৮৮) বেশি।
কয়েকজন কারা সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনের বেলায় বন্দিরা ওয়ার্ডের বাইরে ঘোরাফেরা করলেও বিকেল থেকে তাদের ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে হয়। অধিক বন্দি থাকায় ওয়ার্ডে শোবার পরিবেশ নেই। শীত মৌসুমে তেমন সমস্যা না হলেও, গরমে এই সংকট আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
সিরাজগঞ্জ কারাগারের জেলার মোহাম্মদ ইউনুস জামান বলেন, ‘বর্তমানে এই কারাগারের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দি আছেন। তারা সবাই ওয়ারেন্টের প্রেক্ষিতে বা কোনো না কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে এসেছেন। আমাদের কাজ হলো, যারা এখানে আসবেন তাদের দেখাশোনা করা, ভালো রাখা ও ভালোর পথে আনার চেষ্টা করা।’
জেলার মোহাম্মদ ইউনুস আরও বলেন, ‘বন্দির সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হলেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের যথেষ্ট জনবল রয়েছে। আরও কয়েক শ বন্দি আসলেও সমস্যা হবে না। এ ছাড়াও যেহেতু বন্দি হিসাব করে নিয়মানুযায়ী খাবার দেয়া হয়, তাই বন্দিদের খাবারের কোনো সমস্যা নেই, তবে থাকার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা তো হবেই।’
কারাগারের সুপার এ.এস.এম কামরুল হুদা বলেন, ‘কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৩৫২ জন হলেও, ওই সময়ে যে ভবনগুলো করা হয়েছিল সেখানে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দি থাকতে পারেন। আমাদের এখানে কমবেশি এক হাজার ৫০০-এর মতো বন্দি প্রায় সব সময়ই থাকে। যার ফলে কোনো সমস্যা হয় না।
‘এই মুহূর্তে বন্দি তার চেয়ে একটু বেশি, তবে সমস্যা হচ্ছে না। বন্দি দুই হাজারের ওপরে গেলে একটু সমস্যা হবে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু বন্দি বেশি তাই স্বাভাবিকভাবেই বন্দিরা অতোটা আরামে থাকতে পারেন না, তবে খাবারের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না। কারণ ব্রিটিশদের সময় থেকেই বন্দিদের ডায়েটের (খাবারের) নিয়ম হলো-বন্দি যতজন থাকবেন ততজন নিয়মানুযায়ী খাবার পান। ফলে বন্দি বাড়লেও খাবারে কোনো সমস্যা নেই।’