চট্টগ্রামে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ অবস্থায় অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। বেশিরভাগই নিজের বাসায় থাকছেন না। তবে কৌশলে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম বিএনপির একটি সূত্র নিউজবাংলাকে জানিয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশের দিন থেকে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিএনপি। সেদিন ঢাকায় চট্টগ্রামের ৩০ জনের মতো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার হয়। এরপর অবরোধ চলাকালে চট্টগ্রামে থেকে আরও ১১৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে এখনও পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শীর্ষ বিএনপি নেতাদের অনেকের বাসা-বাড়িতে অভিযানও চালানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের বাসায় অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। তাই গ্রেপ্তারের ভয়ে কৌশলি অবস্থান নিয়েছেন দলটির নেতারা। এমন পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়েননি তারা। বিভিন্ন উপায়ে তারা একে অপরের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন, আন্দোলনে সামিল হতে উৎসাহিত করছেন।
বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘পুলিশ আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। বাসায় বাসায় অভিযান চালাচ্ছে। তারা ঘরে থাকতে পারছেন না। তারপরও আন্দোলন থেমে নেই। সকল কর্মসূচি পালন করছি। সভা সমাবেশ হচ্ছে, মিছিল-বিক্ষোভ হচ্ছে। গ্রেপ্তার হয়রানি করে আন্দোলন দমানো যাবে না।’
জানা গেছে, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে ১০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। নগরীর আকবর শাহ ও পাহাড়তলী থানায়, জেলার হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় কয়েক হাজার অজ্ঞাত নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্র থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ।
বিশেষ করে নগরের শীর্ষ নেতাদের ধরতে দফায় দফায় অভিযান চালানো হচ্ছে। তারাও গ্রেপ্তার এড়াতে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন এড়িয়ে চলছেন। কথা বলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে।
কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ বেড়েছে দলটির। নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন করেও যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন রেখেছেন দলটির নেতারা। ফলে প্রকাশ্যে না আসলেও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে দলটির মধ্যে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ‘হয়রানি, গায়েবি মামলা দিয়ে, গ্রেপ্তার করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। আন্দোলন সফল করে এ অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো হবে।’
হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। অবশ্য তা বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। কয়েকটি পয়েন্টে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। তবে বিএনপি এসব ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয় অস্বীকার করেছে।
রোববার দিনব্যাপী হরতাল
এদিকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেয়ার প্রতিবাদে রোববার চট্টগ্রামে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি।
হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী এবং চট্টগ্রামবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন নেতৃবৃন্দ।
তবে অ্যাম্বুলেন্স, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের বহনকারী যানবাহন এবং ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। পাশাপাশি রবি ও সোমবার বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী দুইদিনের অবরোধ কর্মসূচিও চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।
চট্টগ্রামের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মো. নাছির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম প্রমুখ।