‘আমি কি মরতে পারি না, দেখ পারি কি না’ এ কথা বলেই দড়িতে ঝুলে পড়েন অভিনেত্রী হোমায়রা নুসরাত হিমু। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
র্যাবকে এমন তথ্য দিয়েছেন এই অভিনেত্রীর ‘প্রেমিক’ বলে পরিচিত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফি ওরফে উরফি জিয়া, যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে হিমুকে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
রুফিকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে রুফি হিমুর উত্তরার বাসায় যান। পরবর্তীতে অনলাইন জুয়াসহ বিষয় নিয়ে হিমু ও তার মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে হিমু ভাঙচুর করেন।
র্যাব বলছে, হিমু বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে রুমের বাইরে থেকে একটি মই এনে রুমে ঢোকেন। রুমের সিলিং ফ্যানের হ্যাংগারে আগে থেকেই বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে রুফিকে জানান হিমু।
রুফি র্যাবকে জানান, হিমু আগেও ৩-৪ বার আত্মহত্যা করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এবারও আগের মতো আত্মহত্যা করার ব্যাপারে জানালে রুফি বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। এর মধ্যেই ‘আমি কি মরতে পারিনা, দেখ পারি কি না’ বলে হিমু দড়িতে ঝুলে পড়েন।
র্যাব জানায়, রুফি তখন হিমুর বিছানায় বসে ছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তিনি দেখতে পান, হিমু সত্যি সত্যি গলায় ফাঁস দিয়েছেন। তখন তিনি হিমুকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ সময় পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনেন তিনি। পরবর্তীতে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামান। পরে রুফি, বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হিমুকে মৃত ঘোষণাকরেন।
মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফি
অনলাই জুয়ায় ৪০ লাখের বেশি খোয়ান হিমু
র্যাব জানায়, হিমু দুই-তিন বছরে অনলাই জুয়ায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা খোয়ান। এই টাকার মধ্যে ২১ লাখ টাকা রুফি দিয়েছেন।
কে এই রুফি
র্যাব জানায়, মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফি ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল কেমিকেলের ব্যবসা করতেন। হিমুর খালাতো বোনের সাবেক স্বামী তিনি।
ঘটনার দিন হিমুকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করার পরে রুফি হিমুর ব্যবহৃত দুটি আইফোন ও ব্যবহৃত গাড়ি নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন। পরে তিনি হিমুর গাড়ি উত্তরার বাসার পার্কিংয়ে রেখে দেন। এরপর মোবাইল ফোন দুটি বিক্রির উদ্দেশ্য নিয়ে রাজধানীর বংশাল এলাকায় পালিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মিহির প্রসঙ্গ
র্যাব জানায়, মিহির মেকআপম্যান হিসেবে হিমুর বাসাতেই থাকতেন। ২০১৮ সালের ২২ মে অভিনেত্রী তাজিনকেও হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি, তাজিন পরে মারা যান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমাদের গোয়েন্দারা মিহিরের বিষয়ে কাজ করছে। যেহেতু মামলায় আসামি করা হয়েছে উরফি জিয়াকে, তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে, মিহির কতটা এ ঘটনা সম্পর্কে জানতেন তা নিয়ে। এ ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।