দলের নেতা-কর্মীদের বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ আজকে সারাবিশ্বে একটা মর্যাদার আসন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে উঠে এসেছে। সেটাকেই তারা ধ্বংস করতে চায়। সেই জন্যই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী যে যেখানে আছেন, আপনাদের সংগঠিত হতে হবে যেন অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাস করে যেন একটাও পার না পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর যদি কোনটা ধরা পড়ে হাতেনাতে আগুন দিচ্ছে, ওইটাকে ধরে সঙ্গে সঙ্গে ওই আগুনেই তারে ফেলতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে ওই হাতই পোড়াতে হবে। তাহলেই তারা সিদা (সোজা) হবে। যেমন কুকুর তেমন মুগুর দিতে হয়। তখন ওদের শিক্ষা হবে।
শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াই এদের মুখে কিন্তু তখন সেই ব্যাপারে একটা কথা নাই। শুনেছেন কেউ; এই যে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অত্যাচার গুলি বোমা শিশু হত্যা নারী হত্যা রক্তাক্ত শিশু তারা কি একটা প্রতিবাদ করেছে? করে নাই। তাহলে কাদের তাঁবেদারি করে। কাদের পদলেহন করে লাফালাফি করে সেটাই প্রশ্ন।
কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে আমেরিকার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ভুললে চলবে না বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। অনেক দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণেই বাংলাদেশের সমস্ত ক্ষমতা রাখে। বাংলাদেশের জনগণই কিন্তু এই দেশ স্বাধীন করে অস্ত্র তাতে তুলে নিয়ে।
তাই স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী, স্বাধীনতার আদর্শবিরোধীদের মদদ দিয়ে সরকারবিরোধী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যখন ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত যখন বাংলাদেশটা উন্নত হয়েছে। সারাবিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে মর্যাদা পাচ্ছে। যখন আমাদের দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, উৎপাদন বেড়েছে; যখন মানুষের জীবনে একটু স্বস্তির সময় এসেছে তখনি তারা অস্বস্তিতে ভোগে। অর্থাৎ মানুষ ভাল থাকলে ওদের মনে জ্বালা হয়। ওই বিএনপি-জামায়াত; এদের যন্ত্রণা হয়। মানুষ শান্তিতে ষ্বস্তিতে থাকলে ওদের সেটা পছন্দ হয় না। ওদের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।
তিনি বলেন, এ কারণে এরা জ্বালাও পোড়াও অগ্নিসন্ত্রাস করে বেড়াচ্ছে। তাদের হাত থেকে নারী-শিশু রেহাই পায় না। পুলিশ রেহাই পায় না। হাসপাতাল রেহাই পায় না। রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে সেখানেও হামলা করে। কত বড় জঘন্য চরিত্রের এরা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার ওপর আবার ওদের যুবদলের এক নেতা বুকের ওপর প্রেস লিখে নিয়ে যেয়ে আগুন দিচ্ছে। এরা মানুষকে বোকা বানাবার চেষ্টা। কাজেই ওদের ওই ভাওতাবাজি-সন্ত্রাস এগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। আজকে আমরা চার নেতাকে হারিয়েছি। জাতির পিতাকে হারিয়েছি। আমি তো আমার পরিবারকে হারিয়েছি। কিন্তু একটা কারণেই তো আমাদের রাজনীতি। যে আদর্শ নিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তারা ভেবেছিল ১৫ আগটট আর ৩রা নভেম্বর ঘটিয়ে সেখান থেকে বাংলাদেশকে আবার বিচ্যুত করবে। সেটা তারা পারে নাই। আজকে বাংলাদেশ উঠে এসেছে সারাবিশ্বে একটা মর্যাদা আসন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে। সেটাকেই তারা ধ্বংস করতে চায়।
দলের নেতা-কর্মীদের সারাদেশে অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশনা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক এলাকায়, শুধু এই ঢাকা শহর বলে না। যেখানে যেখানে তারা এই ধরনের অগ্নিসন্ত্রাস করবে সেই এলাকায় কত বিএনপি আছে খুঁজে বের করতে হবে বা জামায়াত খুঁজে বের করতে হবে। ওইগুলিকে ধরিয়ে দিতে হবে। আর মানুষের জানমাল যেন ক্ষতি করতে না পারে তাদেরকে সুরক্ষা দিতে হবে এটাই আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। কারণ আমাদের আর কিছু নাই। আমাদের কোনো মুরব্বি নাই। আমাদের আছে বাংলাদেশের জনগণ। সেই জনগণ নিয়েই আমাদের চলতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, জাতীয় নেতা শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি এবং জাতীয় নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি ।
আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন।