বিএনপিকে শাস্তি পেতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) প্রতিনিধি সম্মেলনে বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি কথা দিয়েছিল তারা ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। কিন্তু তারা কথা রাখেনি, সন্ত্রাস করেছে। সাংবাদিকদের নির্যাতন করেছে, পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে।’
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন শেখ হাসিনা। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের আবাসন, দশম ওয়েজবোর্ড ও কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ২৮ অক্টোবর সাংবাদিকসহ ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন, সুশীল সমাজসহ আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নীরব থাকার তীব্র সমালোচনা করেন।
সরকারপ্রধান বিএনপির সন্ত্রাস নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা যথাযথভাবে তুলে ধরতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহাসমাবেশ করার অনুমতি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী জোট এবং বিএনপি যে একটা সন্ত্রাসী দল এটাই আবার প্রমাণ করল।’
তিনি বলেন, ‘মাঝখানে তারা (বিএনপি) কিছুটা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছিল সরকার তাদের তেমন কোনো বাধা দেয়নি। তাদের ওপর সবসময় একটাই শর্ত ছিল যে, তারা কোনোরকম অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করবে না। তারা যখন সুস্থভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করছিল, তখন কিন্তু তারা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস ধীরে ধীরে অর্জন করতে শুরু করেছিল।
‘কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর তাদের যে ঘটনা, বিএনপি যে সমস্ত ঘটনা ঘটাল, বিশেষ করে যেভাবে পুলিশকে হত্যা করেছে, মাটিতে ফেলে যেভাবে কোপাল, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করল, পেটাল এবং এই ঘটনার পরে জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছুই জুটবে না।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে, সেখানেও পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। আজকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনির ওপর যেভাবে হামলা করছে, এখানে হাসপাতালে বোমা হামলা করল, নারী শিশুদের অত্যাচার করেছে, তাদের সবকিছু বন্ধ করে রেখে দিয়েছে, আমি তফাৎ কিছু দেখতে পারছি না। আমরা এর নিন্দা জানাই।’
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে নিজেরাই পালাল, পালিয়ে গিয়ে এখন আবার অবরোধের ডাক। কীসের অবরোধ? কার জন্য অবরোধ? যখন সারা বিশ্ব বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করছে তখন তাদের কাজ হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। বাংলাদেশের এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, দেখাবে বাংলাদেশে কিছু হয়নি। তাদের হামলা শিকার একদিকে পুলিশ, আর হচ্ছে সাংবাদিক। তারা লালমনিরহাটে আমাদের যুবলীগের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এভাবে হত্যা করা আর মানুষের সম্পদ নষ্ট করা, আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করাই তাদের চরিত্র।’
এসময় গণমাধ্যমের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কোনো কোনো পত্রিকা এটা (২৮ অক্টোবরের ঘটনা) কভার দেয়ারও চেষ্টা করে, তাদের ধিক্কার জানাই। দেখা গেল, যুবদলের একজন নেতা প্রেস লেখা জ্যাকেট পরে আগুন দিচ্ছে, পুলিশ পেটাচ্ছে। তারা ভেবেছিল, রেহাই পেয়ে যাবে। ধরা তো পড়ে গেছে। এর শাস্তি হবে।’
গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো সামান্য কিছু হলেই বিবৃতি দেয়। এখন তারা কোথায়? আমাদের দেশের সুশীল বাবুরা কোথায়? শুধু আওয়ামী লীগে কিছু হলেই বড় করে দেখায়? মানবাধিকার সংগঠনগুলো চুপ কেন? এদের বিবেক বলে কিছু নেই? আওয়ামী লীগের পান থেকে চুন খসলেই তাদের কণ্ঠে অনেক জোর দেখা যায়। এখন বিড়ালের মতো মিউ মিউ করলেও তো দেখতাম। তাও তো দেখা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যেভাবে হাসপাতালে হামলা হয়েছে, এখানেও। জানি না তারা এই শিক্ষাটা ইহুদিদের থেকে পেয়েছে কি না।’
২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর প্রতিটি ক্ষেত্রকে বেসরকারির জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা সরকারে ছিলাম। সরকারে আসার পর মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রকে বেসরকারির জন্য উন্মুক্ত করে দিই।’
তিনি বলেন, ‘বাঙালি জাতি যেন যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে যেন দাঁড়াতে পারে, এটাই ছিল তার (বঙ্গবন্ধু) লক্ষ্য। জাতির পিতার সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নিয়ে আমি দেশে ফিরে আসি। তিন বছর সাত মাস তিনি সময় পেয়েছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আমরা ছয় বছর বিদেশে উদ্বাস্তু ছিলাম। দেশে ফিরে এসে তার অসমাপ্ত কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’