বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুই শ্রমিক নিখোঁজের দাবি, পুলিশ বলছে গুজব

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১ নভেম্বর, ২০২৩ ২০:১৭

শ্রমিক নেতা প্রদীপ কুমার রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রথম দাবি মজুরি বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সময় সরকারি দলের কর্মীরা যে হামলা করেছে তার বিচার করতে হবে। আমাদের দুই সহকর্মী নিখোঁজ। মজুরি বৃদ্ধি, হামলার বিচার ও দুই সহকর্মীর খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে রাজধানীর মিরপুরে দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিকরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাদের দুই কর্মীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পুলিশ বলছে যে এটি গুজব।

বুধবার সকাল থেকেই মিরপুর ১, ২, ৭, ১০, ১৩ ও ১৪ নম্বর গোলচত্বরে অবস্থান নেন হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক। এ সময় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি যারাই মোবাইল ফোন সেটে ছবি তোলা ও ভিডিও করার চেষ্টা করেছেন তাদেরকেই মারধর করেছে শ্রমিকরা।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও পারেননি। শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে তিনি ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।

এদিকে শ্রমিক বিক্ষোভে প্রথম দিনের মতোই বুধবারও গোটা মিরপুর এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। বন্ধ করে দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার দোকানপাট।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকাল ৮টার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন পোশাক শ্রমিকরা। এতে মিরপুর ১০, ১১, ১২ এবং ১ ও ২ নম্বরের আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা রাস্তায় কোনো যানবাহন দেখলেই ঘুরিয়ে দেন।

সকাল ৮টার দিকে পল্লবী থানাধীন পূরবী বাসস্ট্যান্ড থেকে ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কে কয়েক হাজার শ্রমিক লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন। এরপর তারা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মিরপুর ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থমথমে অবস্থা বিরাজ করে মিরপুর জুড়ে।

পল্লবী এলাকা থেকে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ১০ নম্বর গোল চত্বর ও মিরপুর ২ নম্বর ঘুরে মিরপুর ১ নম্বরে এসে অবস্থান নেয়। পরে মিরপুর টেকনিক্যাল মোড়ে গিয়ে তারা আবার বিক্ষোভ মিছিল করে একই পথ ধরে পল্লবী গিয়ে তাদের বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করে।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের নেতৃত্বে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকা প্রদক্ষিণ করেন। যেখানে আগে থেকেই রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান করছিল বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকরা। এ সময় কামাল আহমেদ মজুমদার কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রতিমন্ত্রী পরে দ্রুত মিছিল নিয়ে গোল চত্বর এলাকা ত্যাগ করেন।

অপরদিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মোবাইল ফোনে ছবি বা ভিডিও করতে দেখলেই হামলা করেছেন। এমনকি গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দেয়ার পরও হামলা করা হয়েছে। মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বর এলাকায় কর্মরত কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।

মিরপুর ২ নম্বরে মল্লিক টাওয়ারের সিকিউরিটি গার্ড রহিম মিয়া বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ১১টায় শ্রমিকরা যখন মিছিল নিয়ে এখানে আসে তখন দোকানগুলো বন্ধ করা হয়েছিল। তবে শ্রমিকরা কোনো দোকান ভাঙচুর বা বন্ধ করেনি। শ্রমিকরা এখান থেকে চলে যাওয়ার পর পুনরায় মিরপুর রোডের দোকানগুলো খোলা হয়।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) পল্লবী থানার ওসি মাহফুজুর রহমান মিয়া বলেন, ‘আজ (বুধবার) সকাল থেকে আবারও গার্মেন্টস শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়েছিল। পরে তাদেরকে বুঝিয়ে সড়কে থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে মিরপুরের বেশ কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে তারা তাদের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডেকো রেডওর্ডস, ডেকো এপারেলস, ইপিলন, ডেকো নীড, কংকড, ইভেন্টস গ্রুপ, টিউলিপ, আলানা গ্রুপ, আজমত গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেন, ‘একজন শ্রমিক মাসে ৮ হাজার টাকা বেতন পায়। মেস ভাড়া বাবদই তো চলে যায় ৫ হাজার টাকা। বাকি টাকায় কিভাবে সংসার চলবে। বাজারের যে অবস্থা। এই টাকায় আমরা বেঁচে থাকি কী করে? কয়েক টাকা বেতন বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। এখন জীবন নিয়েই টানাটানি।’

আন্দোলন কতক্ষণ চলবে- এমন প্রশ্নে মিরপুরের শ্রমিক নেতা প্রদীপ কুমার রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রথম দাবি মজুরি বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সময় সরকারি দলের কর্মীরা যে হামলা করেছে তার বিচার করতে হবে।

‘আমরা দুই সহকর্মীর কোন খোঁজই পাচ্ছি না। সুতরাং মজুরি বৃদ্ধি, হামলার বিচার ও দুই সহকর্মীর খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন থেকে সরে যাবো না। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

বুধবার বিকেল ৩টার দিকে ১১ নম্বর এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে রাখতে দেখা যায় ইপিলন গার্মেন্টসের শ্রমিকদের। এ সময় তাদের কারও কারও হাতে লাঠিসোটাও দেখা গেছে। তারা কোনো যানবাহনে হামলা করছে না। তবে কোনো গাড়ি এলে অন্য রাস্তায় ফিরিয়ে দিচ্ছে।

আন্দোলনকারীদের দাবি, তাদের দুই সহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে নিশ্চিত খবর না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে তারা।

শ্রমিকদের সড়ক অবরোধের এ ঘটনায় পুলিশকে অবশ্য নমনীয় ভূমিকায় দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘শ্রমিকরা তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছেন। এটা তাদের ন্যায্য দাবি। এই দাবি পূরণে সংশ্লিষ্টরা কথাও বলছেন। তাদের দাবি পূরণ হলেই রাস্তা ছেড়ে চলে যাবে।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শ্রমিক হত্যা ও হামলার যে অভিযোগ উঠেছে সেটি কতটুকু সত্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শ্রমিক হত্যার মতো কোনো বিষয় আমাদের জানা নেই। তারা বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন করছে। শ্রমিক হত্যার বিষয়টি গুজব বলেই মনে করি।

‘আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ আপনারা শুনেছেন। সেটা নিয়ে থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে ইপিলিয়ন নিটওয়্যার্স কারখানায় দুদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১ থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণার বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নোটিশ জারির তারিখ হিসেবে ৩১ অক্টোবরের কথা উল্লেখ রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর