বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গোড়াতেই গলদ ‘সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন’ বাস টার্মিনালের

চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি টার্মিনালটি পরীক্ষামূলকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এরপর সীমিত আকারে টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল শুরু হয়। পরীক্ষামূলক চালুর পরপরই টার্মিনাল ভবনের আস্তরে ফাটল ও গ্লাস ফিটিংসের কাজে ত্রুটি ধরা পড়ে।

দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী আর আধুনিক সুযোগ সুবিধার মিশেলে নির্মিত হয় সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ টার্মিনালকে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিননন্দন বাস টার্মিনাল বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পরীক্ষামূলক উদ্বোধনের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি টার্মিনালটি।

খোঁজ নিয়ে যায়, টার্মিনালটির নির্মাণ কাজের গোড়াতেই গলদ ধরা পড়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর টার্মিনালের নির্মাণে ত্রুটি ধরা পড়ে। দেয়ালে ফাটলও দেখা দিয়েছে। এছাড়া ছাদ চুইয়ে পানি পড়াসহ আরও কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে আটকে আছে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন।

নগরের কদমতলী এলাকার ৮ একর জায়গাজুড়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই টার্মিনাল নির্মাণ করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। টার্মিনালের নকশায় সিলেটের ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। সিলেটের ঐতিহ্য আসাম টাইপ বাড়ি, চাঁদনীঘাটের ঘড়ির আদলে এর নকশা করা হয়। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেনের নামে এই টার্মিনালের নামকরণের কথা জানিয়েছে সিসিক।

টার্মিনালের নকশা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের তিন শিক্ষক সুব্রত দাশ, রবিন দে এবং মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। আর টার্মিনালটি নির্মাণ করে ডালি কনস্ট্রাকশন।

চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি টার্মিনালটি পরীক্ষামূলকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এরপর সীমিত আকারে টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল শুরু হয়। পরীক্ষামূলক চালুর পরপরই টার্মিনাল ভবনের আস্তরে ফাটল ও গ্লাস ফিটিংসের কাজে ত্রুটি ধরা পড়ে।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, ‘আমাদের অফিসের পাশ দিয়ে পানি পড়ে। সিলিকন না দেয়ায় ভবন বেয়ে পানি আসে। থাই গ্লাসগুলো একটু বাতাস হলেই নড়তে থাকে। কয়েকটি গ্লাস ভেঙেও গেছে। আমরা এসব বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছি।’

সরেজমিনে টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কারুকার্যময় লাল ইটের দেয়ালে ধুলো জমেছে। টার্মিনালের পূর্বদিকে কিছু জায়গায় ভবনের পলেস্তেরা খসে পড়েছে। তিনতলা ভবন বেয়ে পানি টার্মিনালের ভেতরে চলে এসেছে। এছাড়া ইট রঙের স্টিলের ছাউনিতে জং ধরেছে। যাত্রীদের জন্য প্রায় দেড় হাজার আসনের বিশাল ওয়েটিং লাউঞ্জের অনেক স্থানে পানি জমে থাকতেও দেখা গেছে।

বাস মালিকরা জানান, সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন দূরপাল্লার প্রায় পাঁচশ বাস ছেড়ে যায়। তার চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক বাস চলাচল করে আন্তঃজেলা রুটে। কিন্তু এই টার্মিনালের পরিসর ছোট হওয়ায় একসঙ্গে ২/৩ থেকে তিনশ বাস রাখা যায়। এ কারণে অনেক বাস সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ফলে সবসময় যানজট লেগেই থাকে এই সড়কে।

নির্মাণ কাজে ত্রুটির কথা জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘টার্মিনালটি পরীক্ষামূলক চালুর পর নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এরপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর প্রকৌশল বিভাগের এক অধ্যাপক, এলজিইডি সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সমন্বয়ে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি নির্মাণ কাজে ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে। এসব ত্রুটি দূর করার কাজ চলছে। শিগগিরই টার্মিনালটি উদ্বোধন করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টার্মিনালটি নির্মাণ করেছে তাদেরকে নিজ খরচে ত্রুটি সারিয়ে দিতে বলা হয়েছে। তাদের কাজ মনঃপুত না হলে জামানত হিসেবে জমা দেয়া টাকা ফেরত দেয়া হবে না।’

এ ব্যাপারে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডালি কনস্ট্রাকশনের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষমান বাস টার্মিনালটিতে সুযোগ-সুবিধাগুলো ঠিক আছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে সেবা দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যেই স্থাপনাটির একটি অংশে কিছু ত্রুটি দেখা গেছে। এই ত্রুটি সারিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।’

সিসিক সূত্র জানায়, মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট (এমজিএসপি) প্রকল্পের আওতায় সিটি করপোরেশন সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আধুনিকায়নের কাজ শুরু করে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। টার্মিনালের বহির্গমন ভবনের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৩০০ ফুট। এই অংশে ৪৮টি বাস একসঙ্গে দাঁড়াতে পারবে। এছাড়া যাত্রীদের বসার জন্য রয়েছে ৯৭০ আসনের বিশাল হল; রয়েছে ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, ৩০টি টিকিট কাউন্টার ও নামাজের জন্য আলাদা কক্ষ।

নির্মাণ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, টার্মিনালে যাত্রীদের বসার জন্য রয়েছে ৯৭০ আসনের বিশাল হল। রয়েছে ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, ৩০টি টিকিট কাউন্টার ও নামাজের জন্য আলাদা কক্ষ। পুরুষ নারী ও বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন লোকদের ব্যবহার উপযোগী ৬টি টয়লেটও রয়েছে এখানে। প্রয়োজনে হুইল চেয়ার নিয়েও টয়লেট ব্যবহার করা যাবে।

উপরে ওঠার জন্য রয়েছে লিফট এবং খাবারের জন্য রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া যাত্রীর জন্য আলাদা শয্যা এবং ব্রেস্ট ফিডিং জোনও রয়েছে এখানে।

টার্মিনালের পেছনের দিকে নির্মিত হয়েছে একটি মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার সেন্টার। সেখানে মালিক ও চালক সমিতির জন্য রয়েছে ২৪ শয্যার বিশ্রাম কক্ষ, গোসলের ব্যবস্থা, অফিস, লকার ব্যবস্থা, ক্যান্টিন এবং মিটিং ও অনুষ্ঠানের জন্য মাল্টিপারপাস মিলনায়তন।

এ বিভাগের আরো খবর