বিএনপির দেয়া তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নিরুত্তপ্তই ছিল রাজধানী। সড়কগুলোতে গণপরিবহন কম থাকলেও যানবাহন চলেছে অন্যান্য দিনের মতোই। গণপরিবহন কম থাকায় সপ্তাহের অন্যান্য কর্মদিবসের মতো যানজট চোখে পড়েনি। অবশ্য যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিটি সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল অস্ত্রধারী এ বাহিনীর সতর্ক উপস্থিতি।
অবরোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মোতায়েন প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি মোতায়ন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দেয়া চলছে বিজিবির টহল।’
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশব্যাপী রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। বিএনপির পাশাপাশি একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও।
রাজধানীর সড়কের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ছিল পুলিশ-বিজির টহল। ছবি: নিউজবাংলা
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় বোরাক পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
এ বিষয়ে কদমতলী থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে গেছে। তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
এছাড়া, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় ঈদগাহ ও হাইকোর্টের সামনের সড়কে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসটি কদম ফোয়ারার সামনে পৌঁছালে যাত্রীদের নামিয়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্তব্যরত কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন বলেন, ‘হাইকোর্টের সামনে বাসে আগুন দেয়ার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট পাঠানো হয়।’
কদম ফোয়ারার সামনে যাত্রীদের নামিয়ে বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ছবি: নিউজবাংলা
দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর চকবাজারের চানখারপুল মোড়ে অবরোধকারীদের হামলায় তিন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- চকবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হালিম, পরিদর্শক (অপারেশন্স) জাকির হোসেন ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) শুভঙ্কর রায়।
এ ঘটনার বিষয়ে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হালিম বলেন, ‘দুপুর আড়াইটার দিকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল বের করেন। এ সময় অনুমতি না থাকায় মিছিলে বাধা দেয়া হয়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে হঠাৎ আমাদের ওপর হামলা চালান। তাদের হামলায় আমিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’
পরে আহত তিন পুলিশ সদস্যকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন।
ঢামেকের জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরছেন পুলিশ সদস্যরা। ছবি: নিউজবাংলা
এর আগে, মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় একটি পুলিশ বক্স লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এ ঘটনায় এক পুলিশ কনস্টেবল আহত হন। মঙ্গলবার সকালে মোটরসাইকেলে এসে পুলিশ বক্সে ককটেল নিক্ষেপ করে সটকে পড়ে কয়েকজন।
অন্যদিকে, দুপুরে রাজধানীর পল্টন এলাকার বিজয়নগরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, অবরোধের সমর্থনকারী বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
এ বিষয়ে পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন বলেন, ‘দুপুর সোয়া একটার দিকে বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকা থেকে অবরোধের সমর্থনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের একটি মিছিল বের হয়। মিছিল থেকে বিজয়নগরে একটি ককটেল বিস্ফোরণ করেন তারা। এ সময় তারা একটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় প্রাইভেটকারটি রক্ষা পায়।
এর আগে সকাল থেকে পল্টন, বিজয়নগর এলাকায় বিক্ষিপ্ত ঝটিকা মিছিল করে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। এসময় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীদের পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। তবে ওই ঘটনায় কেউ আটক হননি।
অবরোধ চলাকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। ওই এলাকায় সকাল থেকে অবরোধের সমর্থনে কাউকে মিছিল করতে দেখা যায়নি।