ইসরায়েলি বাহিনীর অনুকরণে ঢাকায় হাসপাতালে বিএনপির হামলা ন্যাক্কারজনক বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘২৮ অক্টোবর সমাবেশের নামে হাসপাতাল, পথচারী, সাংবাদিক, পুলিশ এবং বিভিন্ন স্থাপনার ওপর বিএনপির হামলা ইসরায়েলি বাহিনী ও একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার সঙ্গে তুলনীয়।
রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হাসপাতালে হামলা চালিয়ে প্রায় আটশ’ মানুষকে হত্যা করার পরও বিএনপি এবং জামায়াত এই বর্বরতার বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। বরং ইসরায়েলি বাহিনীর অনুকরণে তারা শনিবার হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে।
‘একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজারবাগে হামলা চালিয়েছিলো। আর শনিবার বিএনপি-জামায়াতও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। তারা বিশটির বেশি অ্যাম্বুলেন্স জ্বালিয়ে দিয়েছে। দেশের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দল হাসপাতালে এরকম হামলা করেছে বলে আমার জানা নেই।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির কর্মীরা সমাবেশের নামে নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল, বিজয়নগর, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে একজন পুলিশকে পিটিয়ে পরে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। তাদের হামলায় আরো একশ’র বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া আনসারের ২৫ জন এবং ২১ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তারা শতাধিক গাড়ি পুড়িয়েছে।
শনিবার রাতে আমরা ঢাকা মেডিক্যাল ও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে দেখেছি বহু পুলিশ সদস্য যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। বিএনপির কর্মীরা বেশিরভাগ পুলিশের মাথায় আঘাত করেছে যাতে মৃত্যু হয়।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের কথা বলে বিএনপি সমাবেশ শুরুর আগেই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালিয়েছে। ইতোপূর্বে বিএনপির আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির খাস কামরায় লাথি মেরেছিলো। সেটিও বিচার বিভাগকে তাদের তোয়াক্কা না করার প্রমাণ।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর যে হামলা বিএনপি-জামায়াত চালিয়েছে আমি সেটির তীব্র নিন্দা জানাই। গণমাধ্যমকর্মীরা কোনো দলের পক্ষ হয়ে সেখানে যাননি, নিউজ কাভার করতে গেছেন গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। এগুলোর বিচার হবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব শনিবার নিহত শামীম মিয়াকে যুবদল নেতা বলে দাবি করেছেন। অথচ নিহতের পরিবার বলছে তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তার গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই এবং হাসপাতাল বলছে তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। অর্থাৎ হত্যার দায় এড়ানোর জন্য বিএনপি আবারও মিথ্যাচার করছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি এভাবে যখন তাণ্ডব শুরু করে তখন আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী এই তা বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়।’
তিনি বলেন, ‘যারা এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা দায় এড়াতে পারেন না। কারণ তারা এর প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন। তারা পুলিশের ওপর বোমা এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে এবং পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে বিধায় বিএনপির নেতাকর্মী আহত হয়নি।’
যুক্তরাষ্ট্র শনিবারের সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে- এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরাও সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছি। এবং আশা করবো, যারা পুলিশ মেরেছে, পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, যারা জাজেস কমপ্লেক্সে, হাসপাতালে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নীতি প্রয়োগ হবে।’
বিএনপির নয়াপল্টন অফিসে শনিবার সন্ধ্যায় ‘জো বাইডেনের উপদেষ্টা’ হাজিরের গুজব নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান। মন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন, একজন ব্যক্তি একটু ইংরেজি বলতে পারে; তাও তিনি যে নেটিভ আমেরিকান নন, সেটা তার উচ্চারণে বোঝা যায়। তাকে নিয়ে গিয়ে তারা সেখানে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে এবং পরিচয় দিয়েছে ‘জো বাইডেনের উপদেষ্টা’।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে বলেছে যে ওই ব্যক্তি সরকারের কেউ নন। মির্জা ফখরুল সাহেবও বলেছেন- তার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। বিএনপি যে শুধু সন্ত্রাসী নয়, জালিয়াত রাজনৈতিক দল, এটি তারই প্রমাণ। তারা ইতিপূর্বে কংগ্রেসম্যানদের সই জাল করে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছিলো।’
ড. হাছান বলেন, ‘বিভিন্ন সূত্র বলছে, সেই ব্যক্তিটি ইসরায়েলের একজন এজেন্ট। আপনারা জানেন, ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত কিছু বলেনি। এজন্য ইসরায়েল বিএনপির ওপর সন্তুষ্ট। সে কারণে ইসরায়েলি এজেন্টকে তারা পাঠিয়েছে যাকে নিয়ে বিএনপি শনিবার সভা করেছে।’