ঢাকায় বিএনপি, আওয়ামী লীগ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রবেশমুখ নারায়ণগঞ্জের মহাসড়কে পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা যাত্রীবাহী বাস তল্লাশি করছে। স্বাভাবিকের তুলনায় লোকাল ও দূরপাল্লার যানবাহন অনেক কম থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি শিকার হতে হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা রোধে তিন মহাসড়কে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শনিবার সকাল থেকে মহাসড়কে চলাচলরত ব্যক্তিগত যানবাহন থেকে শুরু করে গণপরিবহনে তল্লাশি করা হচ্ছে। এসময় সন্দেহভাজন মনে হলে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এ ছাড়া ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের ফতুল্লার পাগলা, পঞ্চবটি ও শহরের এলাকাতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। এর আগে গত দুদিন ধরে পাঁচটি চেকপোস্টে তল্লাশি চালানো হয়।
তিনটি মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, মৌচাক, শিমরাইল, কাঁচপুর, মোগড়াপাড়া তারাব বিশ্বরোড ও এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের কাঞ্চন মোড়ে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অবস্থা করছে সাঁজোয়া যানও।
এদিকে সকাল থেকে মহাসড়কসহ নগরের চাষাঢ়া, দুই নম্বর গেটসহ আশেপাশের এলাকার বাস কাউন্টারগুলোর সামনে গণপরিবহন চলাচল খুবই কম। নারায়ণগঞ্জ থেকে গুলিস্তানগামী ও চাষাঢ়া থেকে চট্টগ্রামরোডগামী বাস-লেগুনার সংখ্যা হাতে গোনা। এ ছাড়া নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের রাস্তার পাশে খালি বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
সড়কে গণপরিবহন কম থাকায় যেসব বাস আসছে সেগুলোর প্রতিটিতেই যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। এ ছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল সড়কে চলাচল করতে দেখা গেছে, তবে অন্যদিনের তুলনায় সেগুলো কম। শুধু গণপরিহন নয়, বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশের অধিকাংশ দোকানপাটও বন্ধ।
কাঁচপুরে আরিফ হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘সকাল আটটায় মতলব থেকে রওনা হয়ে ভেঙে ভেঙে কাঁচপুরে আসছি। নানি ঢাকা মেডিক্যালে সেখানে যাব। এখন কাঁচপুর থেকে গাড়ি পাচ্ছি না। কতক্ষণে যাব তাও জানি না।’
সাইনবোর্ড এলাকায় রমজান মোল্লা বলেন, ‘রাস্তায় অনেক পুলিশ, তার উপর আবার গাড়ি নেই, রোদে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত। পরিবেশ তো পুরোপুরি থমথমে। বাসা থেকে বের হয়েছিলাম ঢাকা যেতে কিন্তু ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ি পেলাম না। কিছু লেগুনা চলছে, কিন্তু যাত্রীদের চাপ বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দল সমাবেশ করলেই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয়।’
এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোর নারায়ণগঞ্জ অংশে তল্লাশি চৌকি স্থাপন করেছে জেলা পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার সমাবেশকে ঘিরে সড়কে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার রোধে পুলিশ কাজ করছে। কাউকে আটক বা কোনো কিছু উদ্ধার করা যায়নি। চেকপোস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিকৃত আসামিদের খোঁজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারেও কাজ করছে পুলিশ।’
বিএনপির নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যেতে পারলেও সড়কে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়া হচ্ছে। শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বলেন, ‘আজকের মহাসমাবেশে যোগদান করতে যাওয়া নেতা-কর্মীদের সড়কে বাধা দেয়া হচ্ছে। হয়রানি করে বিএনপিকে দমানো যাবে না।’
এদিকে ঢাকা-চট্রগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তারা ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে মিছিল নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন।