খুলনায় হঠাৎ করেই বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু করেছে পুলিশ। তবে পুলিশের দাবি, মামলা বা পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। অন্যদিকে, বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা বলছেন, আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকাতে বিএনপির মহাসমাবেশ উপলক্ষে ভীতি সৃষ্টি করতে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করেছে।
খুলনা বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত থেকে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে খুলনা জেলা ও মহানগর পুলিশ। সেদিন থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মোট ৫২ জনকে আদালতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মহানগর পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ৩১ জনকে আর জেলা পুলিশ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া জামায়াতের ৫ নেতা-কর্মীও গ্রেপ্তার হয়েছেন।
খুলনা বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, ‘যেসব নেতা-কর্মীদের পুলিশ আদালতে নিয়েছে, তাদের অধিকাংশকে এক বছর পুরোনো পেন্ডিং (অমীমাংসিত) মামলায় আসামি করা হয়েছে। অনেককে পেন্ডিং মামলার অজ্ঞাত আসামির তালিকায় দেখিয়েও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। সেখানে যাতে নেতা-কর্মীরা কম উপস্থিত হন, সেজন্য পুলিশ এ অভিযান শুরু করেছে। গ্রেপ্তারের বাইরেও, অনেক নেতা-কর্মীদের বাড়ীতে গভীর রাতে গিয়ে পুলিশ হয়রানি করছে। এটা সম্পূর্ণ সরকারের নির্দেশ করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যেকোনো সমাবেশের আগে এভাবেই গ্রেপ্তার-হয়রানি করে পুলিশ। তারা বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করে। তবে এগুলো করে আমাদের একটি সমাবেশও তারা বানচাল করতে পারেনি। এসবের মধ্যেও আমরা মহাসমাবেশ সফল করব।’
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জামায়াতে ইসলামী জানায়, খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায়াতে ইসলামীর ৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে খালিশপুর থানা পুলিশ ৪ জনকে ও সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া দলটির শতাধিক নেতা-কর্মীর বাড়িঘর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ বিঘ্ন ঘটাতে খুলনায় জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে তল্লাশি চালাচ্ছে। অভিযানকালে তারা বাসাবাড়িতে থাকা লোকজনকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। সরকার গ্রেপ্তার ও জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে গোটা দেশকে আজ এক বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছে।
তবে পুলিশের দাবি, কাউকে হয়রানি নয়, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, ‘সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো গ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে না। যদি কেউ গ্রেপ্তার হয়ে থাকেন, তবে অন্য কোনো মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হতে পারেন। কোনো বিশেষ অভিযান চলছে না।’
খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে গ্রেপ্তারের সঙ্গে পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) কোনো সম্পর্ক নেই। যাদের মামলা বা ওয়েরেন্ট নেই তাদের কাউকে তো গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরা নয়, অন্যান্য আসামিও তো প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার হচ্ছে।’