বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বঙ্গবন্ধু টানেল: আনোয়ারা প্রান্তে জমির দাম বেড়েছে ৪০ গুণ

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টানেল নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকেই আনোয়ারা প্রান্তে বাড়তে থাকে জমির দাম। সেসময় প্রতি শতাংশ জমি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা কিনতে গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ টানেল নির্মাণের চার বছরে উদ্বোধনের পূর্বেই জমির দাম বেড়ে ২০ থেকে ৪০ গুণ। তারপরও বিক্রি না করে আরও দামের আশায় জমি আঁকড়ে পড়ে আছেন অনেকে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম। বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর থাকার সুবাদে দেশীয় অর্থনীতির প্রধান করিডোরও বলা হয় এই বন্দরনগরীকে। এমন বড় শহরের মাত্র এক কিলোমিটারের কম দুরত্বে থেকেও যেন যোজন যোজন দূরে অবস্থান আনোয়ারা উপজেলার। ‘চট্টগ্রামের প্রাণ’ খ্যাত কর্ণফুলী নদীই গড়ে দিয়েছে এমন দূরত্ব। শত বছরে নদীর শহরের প্রান্তে গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক আকাশচুম্বী দালান। নানা শিল্প কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঠাসাঠাসি করে অবস্থান করছে নগরে। বর্ণিল আলোকচ্ছটায় যখন ছেয়ে যায় নগরের রাতের আকাশ, ও প্রান্তের মানুষ তখন দূর থেকে দেখে যেত সেই আলোর ফোয়ারা।

শহরের দিকে এক ইঞ্চি জমিও কেনা যেখানে সোনার হরিণ, অপর প্রান্তে তখনও অযত্নে-অবহেলায় পড়ে ছিল বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ। শহরের প্রতি শতাংশ জমির মূল্য বর্তমানে অর্ধকোটি ছড়িয়েছে, অথচ কর্ণফুলীর আনোয়ারা প্রান্তে তার দাম অর্ধলাখেরও কম। তবে বঙ্গবন্ধু টানেলের কল্যাণে নদীর এ প্রান্তের জমির দাম বাড়ছে রকেটের গতিতে।

উদ্বোধনের আগমুহূর্তে বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে ব্যস্ততার শেষ নেই কর্তৃপক্ষের।

টানেলের কারণে আনোয়ারায় শিল্পায়নের জোয়ার লেগেছে। তাই বেড়েছে জমির চাহিদা। বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। তাই জমি কেনার হিড়িক পড়ে গেছে আনোয়ারায়।

টানেলের সুফল পেতে মরিয়া স্থানীয়রাও। কম দামে সূচ্যগ্র পরিমাণ জমিও ছাড়তে রাজি নন তারা।

আগামী ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেলটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে লক্ষ্যে চলছে চট্টগ্রামে চলছে নানা আয়োজন। টানেল দিয়ে যান চলাচল শুরু হলেই নদীর দুপ্রান্তের হাজার বছরের দুরত্ব ঘুছে যাবে, পাহাড়সম ফারাক মিলিয়ে যাবে শূন্যে।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টানেল নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকেই আনোয়ারা প্রান্তে বাড়তে থাকে জমির দাম। সেসময় প্রতি শতাংশ জমি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা কিনতে গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ টানেল নির্মাণের চার বছরে উদ্বোধনের পূর্বেই জমির দাম বেড়ে ২০ থেকে ৪০ গুণ। তারপরও বিক্রি না করে আরও দামের আশায় জমি আঁকড়ে পড়ে আছেন অনেকে।

আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইয়াছিন হিরু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টানেল হওয়ার আগে যে জমির দাম ছিল দুই লাখ টাকা গণ্ডা (১.৯৮ শতাংশ), এখন সেই জমির দাম হয়ে গেছে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। অনেকে এখন জমি কেনার চেষ্টা করলেও কিনতে পারতেছেন না। জমি বিক্রিই করতে চাচ্ছে না কেউ।’

জমির মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার রেজাউল করিম বলেন, ‘জমির ক্রেতা-বিক্রেতার আলাপ-আলোচনা থেকে বোঝা যায়, জমির দাম ভালোই বেড়েছে। তবে মৌজা রেট পরিবর্তন হয় দুই বছর পরপর। টানেল বা সংযোগ সড়কের আশপাশের মৌজাগুলোতে জমি কেনা-বেচার হার আগের চেয়ে অন্তত ১৫ শতাংশ বেড়েছে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হলেও মূল শহর থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় অনেকটা অবহেলিত ছিল নগরীর পতেঙ্গা এলাকাও। বঙ্গবন্ধু টানেল এই পতেঙ্গা দিয়েই শহরের সঙ্গে আনোয়ারাকে যুক্ত করেছে৷ ফলে পতেঙ্গা এলাকার জমির মুল্যেও পড়েছে টানেলের প্রভাব।

এ ব্যাপারে পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মো. জাহেদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টানেল আর আউটার রিং রোড হওয়ার আগে এখানে গণ্ডাপ্রতি জমির দাম ছিল ৩ লাখ টাকার মতো। এখন সেটা বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। আগে ফসলি জমি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, এখন ১৫ লাখের নিচে তা কেনার কথা কেউ ভাবতেই পারে না। তা ছাড়া টানেল ও আউটার রিং রেডের আশপাশে এখন চাইলেও জমি পাওয়া যাচ্ছে না।’

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং টানেল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। পরে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেলের টিউব নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। টানেলটি নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’।

শুরুতে বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প ব্যয় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ধরা হলে ২০১৭ সালে তা বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর