ঘূর্ণিঝড় হামুন-এর আঘাতে কক্সবাজারে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ঝড় আঘাত হানার পর থেকে বুধবারও সারাদিন বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক হয়নি এই পর্যটন জেলায়।
ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে গাছপালা আর বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও উপড়ে পড়েছে সড়ক এবং ঘরবাড়ির ওপর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কক্সবাজার জেলার ৭১টি ইউনিয়ন ও মহেশখালীসহ দুটি পৌরসভা। জেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ জন।
জেলা প্রশাসনের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণীতে এমন তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ৪২ হাজার ৯৫৯টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত বাড়িঘরের সংখ্যা ৫ হাজার ১০৫টি। আর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৭৪৯টি বাড়িঘর।
কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডে সমিতিপাড়ায় ঝড়ের আঘাতের ক্ষত। ছবি: নিউজবাংলা
অন্যদিকে হামুন-এর তাণ্ডবে পল্লী বিদ্যুতের ৩৫৪টি খুঁটি ভেঙে গেছে। ২৩টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে, ৪৯৬টি স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। আটশ’ স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভা, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, সদর উপজেলা এখনও বিদ্যুৎহীন। বিদ্যুৎ না থাকায় এসব এলাকায় মোবাইল যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
কক্সবাজার শহর ঘুরে দেখা গেছে- হাসপাতাল সড়ক, হলিডে মোড়, সীগাল পয়েন্টে অসংখ্য গাছ ভেঙে সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে আছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে আছে বিভিন্ন জায়গায়। ফলে বিদ্যুতের দেখা নেই ২০ ঘণ্টা ধরে।
ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে কক্সবাজার শহরের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও লণ্ডভণ্ড অবস্থা। চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। মহেশখালীতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটের।
কক্সবাজার পৌরসভার সমিতি পাড়া, ফদনার ডেইল, নাজিরারটেক এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।
মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে কুতুবদিয়া দিয়ে কক্সবাজারে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় হামুন। ওই সময় গাছ ও দেয়াল চাপা পড়ে তিনজন প্রাণ হারান। তারা হলেন- কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার খুইল্যা মিয়ার ছেলে আবদুল খালেক, মহেশখালীর নতুন বাজার ইউনিয়নের হারাধন দে ও চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের জাফর আহমেদের ছেলে আসকর আলী।
মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবু আহমেদ বলেন, ‘এখানকার কুতুবজোম, হোয়ানক, ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কালারমারছড়া ইউনিয়ন ঝড়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ঘর, গাছ, পানের বরজ ভেঙে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ।’
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘পৌরসভায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ভেঙে গেছে আড়াই শতাধিক ঘর। হামুনের তাণ্ডবে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎবিহীন কক্সবাজারে এখন অচলাবস্থা। সবমিলিয়ে এক ভূতুড়ে অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে এই পর্যটন নগরী।’