বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

 বাঁশখালী জুড়ে হামুনের আঘাতের ক্ষত

  • প্রতিনিধি, আনোয়ারা ও বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)   
  • ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ ১৯:৫৪

বাঁশখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবেলায় ১০৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়নি। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণের চেষ্টা করছি। পরবর্তীতে করণীয় নির্ধারণ করব।’

চট্রগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীতে মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দুইঘন্টার তান্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড় হামুন। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয় এলাকাটিতে। বড় বড় গাছ রাস্তায় উপড়ে গিয়ে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রধান সড়কে বড় গাছ পড়লেও ফায়ার সার্ভিস তা সরিয়ে নিলে মূল সড়কে বুধবার বিকেলের দিকে যোগাযোগ স্বাভাবিক হলেও অভ্যন্তরীণ সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা এই প্রতিবেদন লেখা অবদি কার্যত অচল হয়ে আছে।

বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, ৪০টির উপরে বৈদ্যুতিক খুঁটি দুমড়েমুচড়ে গেছে। বাঁশখালীর প্রায় প্রতিটি ঘরের বৈদ্যুতিক সংযোগের তার ছিড়ে গেছে এ দুর্যোগে। বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে পল্লীবিদ্যুৎ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশখালীর কালীপুর, কাথরিয়া, বৈলছড়ি, বাহারচরা, খানখানাবাদ, গন্ডামারা, পুকুরিয়া, ছনুয়া, পুইছড়ি, সরল, শীলকূপ ইউনিয়নে বড় বড় গাছ উপড়ে কাচা ঘর, টিনের ঘর ভেঙ্গে গেছে। অভ্যন্তরীন রাস্তাগুলোতে গাছ পড়ে অচল হয়ে আছে। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক সংযোগ ছিড়ে তারগুলো বিপদজনক অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রাস্তার ওপর।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষগুলোর অসহায় আর্তনাদ ছিল চোখে পড়ার মত। পানের বরজ, মৌসুমি সবজি খেত, ধানক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। মঙ্গলবার রাত থেকে মোবাইলে সংযোগ কার্যত অচল হয়ে থাকায় কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করা যাচ্ছেনা।

বাহারচরা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বামী হারা তিন কন্যা সন্তানের জননি রেহেনা আক্তার বলেন, ‘স্বামীর অবর্তমানে অনেক কষ্ঠ করে সন্তানদের মানুষ করছি সেলাইয়ের কাজ করে। ঘরের ওপর গাছ পড়ে আমার সেলাই মেশিনটা নষ্ট হয়ে গেছে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঘরটা করেছি। এখন কি করব, কোথায় যাবো বুঝতে পারছিনা।’

কালীপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইউনুছের স্ত্রী হালিমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের নাই বলতে কিছুই নেই। স্বামী একদিন কাজ পেলে তিনদিন বেকার থাকে। মাথার ওপর ছাউনিটা ছাড়া কিছুই ছিলনা। এটাও চলে গেল। কোথায় থাকব, কি করব আল্লাহ জানে!’

নিজের ভাঙ্গা বসতবাড়ির সামনে অসহায় হালিমা আক্তার। ছবি: নিউজবাংলা

কী বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা

বাহারচরা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউছুপ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের শতাধিক ঘর নষ্ট হয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক লাইন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কোটি টাকার মতন।’

চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন পাহাড় অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় পানের বরজ ও শাকসবজির চাষ হয়, গতকাল ঘূর্ণিঝড় হামুনের তান্ডবে প্রায় ৯০ শতাংশ পানের বরজ ও শাকসবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়।’

এছাড়াও প্রায় ৫০টি বাড়িঘর ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবে দুমড়ে মুচড়ে যায় যার আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ৫কোটি টাকা হবে বলে তিনি জানান।

সরল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। কাচাঘর, টিনের ঘর মিলে প্রায় ৫০ এর উপরে ক্ষতি হয়েছে। ২ নং ওয়ার্ডের ৫০ বছর বয়সী শফিউল আলম নামের একজন গাছ পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে সুচিকিৎসার জন্য বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করা হয়েছে।’

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি কামাল উদ্দিন পিপিএম বলেন, ‘তৈলারদ্বিপ সেতু থেকে পুইছড়ি পর্যন্ত বাঁশখালীর সড়কে প্রচুর গাছ উপড়ে পড়েছিল। আমরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় দুপুর নাগাদ সকল গাছ সরিয়ে নিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করতে সক্ষম হই। বাঁশখালীর ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এই আসল চিত্রটা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনুমান করছি।’

বাঁশখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবেলায় ১০৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়নি। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণের চেষ্টা করছি। পরবর্তীতে করণীয় নির্ধারণ করব।’

এ বিভাগের আরো খবর